কিংশুক কি প্রশাসনের চেয়েও শক্তিশালী

সম্পাদকীয়

কক্সবাজার যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। সোনার ডিমের লোভে সবাই তাকে হত্যা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সেখানকার পাহাড়, বন, প্যারাবন ধ্বংস করা হচ্ছে নির্বিচার।

সরকারি প্রকল্প তো আছেই, বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছে, সেখানকার পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। গড়ে উঠছে রিসোর্ট ও মাছের খামার। এ নিয়ে বারবার প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রথম আলোর শনিববারের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজারের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের প্যারাবন উজাড় ও দখল করে রিসোর্ট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কিংশুক ফার্মস লিমিটেড। আরও ভয়াবহ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি আগুন দিয়ে প্যারাবন পুড়িয়ে দিচ্ছে।

এতে সেখানকার পাখির আবাসস্থলসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। গত এক মাসে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক প্যারাবন নিধনের একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপরও উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে সেখানে নির্বিকার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।

প্যাঁচার দ্বীপে প্রায় ২০ বছর আগে উপকূলীয় বন বিভাগ এ প্যারাবন সৃজন করেছিল। সেখানে এখন ১৫ থেকে ২০ একর প্যারাবন আছে। এলাকাটি ৪০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছিল। কিন্তু এক মাস ধরে কিংশুক ফার্মস প্যারাবনের অন্তত ২০ হাজার গাছ উজাড় করে রিসোর্ট ও মাছের খামার তৈরি করছে। বনের ভেতরে লম্বা পাকা দেয়াল তুলে ১০ একরের বেশি প্যারাবন দখলও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অবশিষ্ট প্যারাবনও নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত সরকারি দপ্তরের কেউ সেখানে যাননি।

প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে চলমান এ ভয়াবহ অরাজকতা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছেন একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলছেন, প্যারাবন দখল করে রিসোর্ট ও মাছের খামার তৈরির সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। এর পেছনে খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ কারণে অনেকে চুপ করে আছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা বিষয়টা জানে ঠিকই, কিন্তু কিংশুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে। এর মধ্য দিয়ে গোটা প্যারাবন দখলে নিতে প্রতিষ্ঠানটিকে সুযোগ করে দিচ্ছে না তারা? তাহলে কি পরিবেশবাদীদের অভিযোগই সত্য?

প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের এমন হাত গুটিয়ে থাকা অবশ্যই সন্দেহ তৈরি করে। কিংশুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিসের এত ভয়? প্রতিষ্ঠানটি কি প্রশাসনের থেকেও বেশি শক্তিশালী? ইতিমধ্যে কক্সবাজার বন আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ প্যারাবন নিধনের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন প্রশাসনের দিক থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়।