রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায়

সম্পাদকীয়

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাঝেমধ্যেই যাত্রীদের মালামাল খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিছু সৌভাগ্যবান যাত্রী খোয়া যাওয়া মাল ফেরত পেলেও বেশির ভাগ পান না। কিন্তু বিমানবন্দরের সুরক্ষিত লকার থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনা বিস্ময়কর।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়ে গেছে। গত শনিবার (২ আগস্ট) সোনা চুরির চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ধরা পড়ে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে শুল্ক বিভাগে দুটি গুদাম বা লকার রয়েছে।

এর মধ্যে নিচতলায় শুল্ক বিভাগের স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের বের হওয়ার পথে তল্লাশি টেবিলের পাশে ছোট একটি লকার আছে। সেখানে তল্লাশির সময় তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করা পণ্য রাখা হয়। সোনা বা বেশি মূল্যবান সামগ্রী হলে সেটা নিচতলায় ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার পাশেই শুল্ক হাউসের গুদামে নিয়ে রাখা হয়, যেখানে আলাদা লকার রয়েছে।

বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা একে চুরির ঘটনা বলে চালিয়ে দিলেও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য হলো, এক দিনে নয়, বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে সোনা সরানো হয়েছে। ভেতরের লোকজনই এর সঙ্গে জড়িত। ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, গুদামে অনেকগুলো লকার থাকলেও সোনা চুরি হয়েছে একটি লকার থেকে। এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।

নিয়মানুযায়ী বিমানবন্দর থেকে চোরাচালানের সোনা উদ্ধার হলে সেটা জব্দতালিকা করে যত দ্রুত সম্ভব (সর্বোচ্চ ৪ মাস) বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পাঠানোর কথা। কিন্তু দু-তিন বছর আগে জব্দ করা সোনা বিমানবন্দরের গুদামে রেখে দেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? শুল্ক বিভাগ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুল্ক বিভাগের দুজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, সন্দেহের তালিকায় আছেন আরও কয়েকজন।

শাহজালাল বিমানবন্দরকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। সেখানে ২০–২১টি সংস্থা আছে নিরাপত্তার দায়িত্বে। পুরো বিমানবন্দর সিসিটিভির আওতায়। এরপরও বিপুল পরিমাণ সোনা লকার থেকে কীভাবে চুরি হলো? দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কী করছিলেন? শুল্ক বিভাগের গুদামে তো অন্য কারও যাওয়ার কথা নয়।

একজন শুল্ক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালামালের হিসাব করতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরই চুরির ঘটনা উদ্‌ঘাটিত হলো। জব্দ করা মালামাল হিসাব করার জন্য অটোমেশনের কাজ চলছিল। তাহলে অটোমেশনের প্রক্রিয়া শুরু না হলে কি চুরির ঘটনা ধরা পড়ত না?

৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনা হেলাফেলার বিষয় নয়। যাদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সোনা চুরির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত, সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বিমানবন্দর কিংবা অন্যান্য বন্দরে কিছু পণ্য উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কৃতিত্ব দাবি করেন। কোন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কত বেশি পণ্য বা সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, তা সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারও করে থাকেন। কিন্তু তাঁদের এই উদ্ধার করা পণ্যের আড়ালে কী পরিমাণ পণ্য চুরি হয়ে যায় যায়, সেটা সম্ভবত কখনো জানা যায় না।