নার্স-সংকট কাটানোর নামে তামাশা বন্ধ করুন

সম্পাদকীয়

দেশে নার্স-সংকট নতুন নয়, কিন্তু তাই বলে জোড়াতালি দিয়ে সংকটের সমাধান করতে হবে? পটুয়াখালীর বাউফলে বঙ্গমাতা নার্সিং ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ এবং একজন পরিদর্শককে দিয়ে চালু করেছে সরকার। এ বছর ৪৩ জন ছাত্রছাত্রীও ভর্তি হয়েছেন সেখানে।

প্রথম আলোর খবর বলছে, অধ্যক্ষ ও পরিদর্শক শুধু যে পড়াচ্ছেন, তা-ই নয়; অধ্যক্ষকে পড়ানোর বাইরে পতাকা টাঙানো ও প্রতিদিন ফটক খুলে দেওয়া ও আটকানোর কাজও করতে হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের চেয়ার-টেবিল বা খাবারব্যবস্থাও অপ্রতুল।

তাঁরা বলেছেন, অধ্যক্ষ কখনো কখনো নিজের বাসার রাঁধুনিকে দিয়ে রান্না করিয়ে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। ক্লাস চালাতেও ইনস্টিটিউটটিকে নির্ভর করতে হচ্ছে অতিথি শিক্ষকদের ওপর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত তিনজন নার্স থাকতে হবে। সে হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৯১ জন নার্স প্রয়োজন। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারিভাবে কর্মরত নার্সের সংখ্যা ৪২ হাজার। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা সাড়ে ৭৬ হাজারের মতো। এ কথা সত্য, নার্স-সংকটের কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা পান না। কিন্তু সংকট কাটাতে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেওয়া এবং এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন ছিল। সেদিকে নজর দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

নার্সিং যাঁরা পড়তে আসছেন, তাঁদের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করতে হয়। তাঁদের মৌলিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবচ্ছেদবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, ওষুধ-সংক্রান্ত বিজ্ঞানসহ আরও নানা বিষয়ে লেখাপড়া করতে হয়। বঙ্গমাতা নার্সিং ইনস্টিটিউটে ছাত্রছাত্রীদের যেখানে খাওয়াদাওয়া, চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা নেই, শিক্ষক বলতে একজন অধ্যক্ষ, সেখানে লেখাপড়ার হালচাল আর কেমন হতে পারে? তা ছাড়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের অনুমোদন পেতেও অনেকগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব বাধ্যবাধকতার বাইরে রাখা শুধু অনুচিত নয়, অন্যায়।

কিন্তু আমরা প্রায়ই তা-ই হতে দেখছি। দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে ঠিকই, তাতে শিক্ষার মান কতটা বাড়ল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

এরই মধ্যে হরেদরে অনুমোদন পাওয়া চিকিৎসাশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছেন এবং প্রায়ই হাসপাতালগুলোয় জনদুর্ভোগের কথা শোনা যাচ্ছে। দোলনা থেকে কবরে যাওয়ার আগপর্যন্ত চিকিৎসা পেশায় যুক্ত মানুষকে আমাদের প্রয়োজন। তাঁদের ওপর আমাদের ভালো থাকা নির্ভর করে। এ জায়গায় আপসের কোনো সুযোগই নেই।

চিকিৎসাশিক্ষার ওপর একটা দেশের মানুষের সুচিকিৎসা নির্ভরশীল। আর সুচিকিৎসা একটা দলবদ্ধ উদ্যোগ। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, হাসপাতালের অন্যান্য কর্মী, ওষুধপথ্য, বিনিয়োগ-ব্যবস্থাপনা—সবকিছু যখন ঠিকঠাক থাকে, তখন মানুষ চিকিৎসাসেবা পায়। অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ করে কার কী লাভ হচ্ছে, তার একটা মূল্যায়ন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। কথাটা কবে কর্তৃপক্ষ আমলে নেবে?