নৌ পুলিশ সদস্যদের চাঁদাবাজি বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এ ধরনের অভিযোগ যেন অনেকটাই আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু পদ্মা নদীর জেলেরা নৌ পুলিশ সদস্যদের চাঁদাবাজির কারণে তাঁদের পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হওয়ার যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই।

৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলাসংলগ্ন পদ্মা নদীতে নৌ পুলিশের চাঁদাবাজি সম্পর্কে জানা গেছে। স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেছেন, জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামলেই নৌ পুলিশ তাঁদের আটক করে চাঁদা দাবি করে।

টাকা না দিলে জাল নিয়ে চলে যায়। এমনকি মামলা ও সাজা দেওয়া হয়। লক্ষণীয় হলো, পুলিশের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজির এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করা হয়নি। নদীর এপারের অর্থাৎ পাটুরিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এ কাজের জন্য পদ্মার ওপারের দৌলতদিয়া ও কাজিরহাট ফাঁড়ির সদস্যদের দায়ী করেছে।

এভাবে নদীর ওপার অর্থাৎ অন্য জেলার পুলিশ সদস্যদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া কতটা গ্রহণযোগ্য? নাকি এটা চাঁদাবাজির অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া বা আমলে না নেওয়ার একটি কৌশল? নদীর এপার বা ওপার, যে ফাঁড়ির সদস্যরাই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকুন না কেন, তাঁরা তো নৌ পুলিশেরই সদস্য। সে হিসেবে নৌ পুলিশকেই এ দায় নিতে হবে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনটিতে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী নয়াকান্দি গ্রামের কথা বলা হয়েছে। গ্রামটির অন্তত ৬০টি পরিবার নদীতে মাছ ধরে সংসার চালায়। পরিবারগুলোর বেশির ভাগ সদস্যই আগে কৃষিকাজ করতেন। নদীভাঙন ও সরকারি প্রকল্পের কারণে কৃষিজমি হারিয়ে তাঁরা নদীতে মাছ ধরতেন।

নৌ পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা নদীতে নামতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন নয়াকান্দি গ্রামের অন্তত ১২ জেলে। এই জেলেরা অভিযোগ করেন, নৌ পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা পেশা বদলানোর কথা ভাবছেন। পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে পেশা পরিবর্তনের বিষয়টি একই সঙ্গে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি উদ্বেগজনক।

এ ঘটনা ওই এলাকার অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নৌ পুলিশের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিবালয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, জেলেদের কাছে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানার পরপরই তিনি পাটুরিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের অভিযোগের কথা বলেছেন। চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে নৌ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।

যেহেতু একজন জনপ্রতিনিধিও চাঁদাবাজির বিষয়টি জেনেছেন, আমরা আশা করি, তদন্ত করে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ হোক, জেলেরা নদীতে মাছ মারার সুযোগ পাক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।