অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হোন

সম্পাদকীয়

নদী–পাহাড়–সমুদ্রবেষ্টিত অনন্য শহর চট্টগ্রাম। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব না দেওয়ায় শহরটি তার সৌন্দর্য ও অনন্যতা হারাতে বসেছে। দুই যুগ আগেও যেসব পাহাড় দেখা যেত, তার অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে। সড়ক নির্মাণ বা সরকারি উন্নয়ন বাস্তবায়নেও পাহাড় কাটা থেমে নেই। ফলে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা আরও বেশি মদদ পাচ্ছেন পাহাড় কাটায়। জরিমানা ও মামলা করেও তাঁদের থামানো যাচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, চট্টগ্রাম কি অচিরেই পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে?

চট্টগ্রামের পাহাড়ের পরিমাণ কীভাবে কমছে, তার একটি চিত্র উঠে এসেছে বুধবার প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে। একটি গবেষণা ধরে প্রতিবেদনটি বলছে, ২০০০ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা এলাকার পরিমাণ ছিল ৬৭৯ হেক্টর। আর ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টরে। এরপর পাহাড় কাটা নিয়ে আর গবেষণা না হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, প্রতিবছর যে হারে পাহাড়নিধন চলছে, তাতে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় কাটা এলাকা বেড়ে এখন দুই হাজার হেক্টর হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে গত এক বছরে পাহাড় কাটার অভিযোগে ১২টি মামলা করেছে। আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ২২। ২০ বছরে মামলা হয়েছে শতাধিক। আবার অধিদপ্তরের অগোচরে রয়ে যায় অনেক পাহাড় কাটার ঘটনা। বায়েজিদ ও আকবরশাহ এলাকায় বেশি পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মামলা হয়েছে এ দুটি এলাকায়। এলাকা দুটিতে পাহাড় কাটার ঘটনা বিগত বছরগুলোতে অসংখ্যবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। পরিবেশবিদেরা সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গেলেও পাহাড়খেকোদের আক্রমণের শিকার হন।

এখনো আকবরশাহ ও বায়েজিদ এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। আকবরশাহ এলাকায় এখন পাহাড় কাটার মূল হোতা আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল হক ওরফে জসিম। পাহাড় কাটার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে পরিবেশের যে ভয়াবহ ক্ষতি তিনি করে যাচ্ছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ দুই থানায় পাহাড় কাটায় যাঁদের নাম উচ্চারিত হয়, তাঁরাও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

এটি পরিষ্কার যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও ক্ষমতাচর্চা করে চট্টগ্রামকে পাহাড়শূন্য করে ফেলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদেরও এখানে দায় আছে। তাঁরা কেন দলের অভিযুক্ত নেতাদের থামাতে সচেষ্ট হচ্ছেন না? চট্টগ্রামের চিহ্নিত পাহাড়খেকোদের কেন থামানো যাচ্ছে না, তঁাদেরকে কারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন? স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে শুধু মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হলে হবে না, প্রয়োজনে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে এই দুর্বৃত্তদের থেকে বাঁচান।