বিএমডিএ কি ঠ্যাঙারে বাহিনী তৈরি করেছে

সম্পাদকীয়

সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখানো কিংবা মারধর করার কাজটি এত দিন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ‘এখতিয়ারে’ ছিল। কোনো পত্রিকা ও টেলিভিশনে নেতিবাচক খবর প্রচারিত হলেই তঁারা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হতেন।

এই ‘মহতী কাজে’ এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও যোগ দিয়েছেন। রাজশাহীতে নতুন করে সাংবাদিক পেটানো ঠ্যাঙারে বাহিনীর উদ্ভব ঘটেছে।

রাজশাহীতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের দুই সাংবাদিককে মারধর করেন রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কর্মচারীরা। তাঁদের ‘অপরাধ’ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাসময়ে অফিসে উপস্থিতি নিয়ে টেলিভিশনে সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচার।

সরকার অফিসের সময়সূচি ঘোষণা করেছে সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা। চাকরিবিধি অনুযায়ী, প্রত্যেক কর্মকর্তা–কর্মচারী নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে ওই দুই সাংবাদিক বিএমডিএ অফিস নিয়ে সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচার করে কোনো অন্যায় করেননি।

বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ নির্ধারিত সময়ের পরে অফিসে আসার পর সাংবাদিকদের কাছে উল্টো কৈফিয়ত দাবি করেছেন, কাদের অনুমতি নিয়ে সেখানে ছবি তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের মারধরের হুমকি দিয়ে ওপরে চলে যান। এই ঔদ্ধত্য কোথায় পেলেন তিনি? ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওই নির্বাহী পরিচালক ওপরে যাওয়ার পরই কয়েকজন কর্মচারী সংঘবদ্ধভাবে নিচে এসে দুই সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করেন, তাঁদের ক্যামেরা ও বুম ভাঙচুর করেন। কর্মচারীদের মারধরে এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি কানে শুনতে পারছেন না বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক যে মামলা করেছেন, তাতে ওই নির্বাহী পরিচালককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। বিএমডিএর চেয়ারপারসন ও সাবেক সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে সাংবাদিকদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তঁার আশ্বাসে সাংবাদিকেরা অবস্থান কর্মসূচিও স্থগিত রেখেছেন। ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু আমরা মনে করি, বিএমডিএর কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হতে পারে না। ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। যঁারা সাংবাদিকদের মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন, তঁারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। সাময়িক বরখাস্ত তঁাদের শাস্তি হতে পারে না। তঁাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। একইভাবে ঘটনার মূল হোতা নির্বাহী পরিচালককেও গ্রেপ্তার করতে হবে। তঁার হুকুম বা সম্মতি ছাড়া কর্মচারীদের পক্ষে কোনোভাবে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার মতো ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। এ ঘটনার পুরো দায় নির্বাহী পরিচালককেই নিতে হবে।

কিছুদিন আগে কক্সবাজারের টেকনাফের আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকায় খবর ছাপা হলে টেকনাফের ইউএনও এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

পরে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরে তঁাকে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের কেন্দুয়া উপজেলার ইউএনওর সংবাদ সম্মেলনের খবর এক সাংবাদিক তঁার ফেসবুকে প্রকাশ করলে ওই সরকারি কর্মকর্তা তঁার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনার জেরে কেন্দুয়ার ইউএনওকে বদলি করা হয়।

কিন্তু রাজশাহীর ঘটনা হুমকি-গালাগালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিএমডিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে যে কাণ্ড করেছেন, তা কেবল নিন্দনীয় নয়, ফৌজদারি অপরাধ। ফৌজদারি অপরাধের বিচার ফৌজদারি আইনেই হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা যা খুশি করতে পারেন না। তঁারা আইনের ঊর্ধ্বে নন। জনগণের করের অর্থে তঁাদের বেতন-ভাতা হয়। কথায় কথায় সাংবাদিকদের গালাগাল করা, হুমকি দেওয়া কিংবা সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হোক।