রাজবাড়ীর জালাল সিকদার ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় অফিস সহকারীর কাজ করতেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, উপহার হিসেবে জালাল দেড় শ টাকা দামের একটি ক্যাকটাস পেয়েছিলেন। একসময় সেই ক্যাকটাস থেকে বেশ কিছু চারা জন্মে। ৩৫ হাজার টাকায় চারাগুলো বিক্রিও করে দেন। এরপর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নানা জাতের গাছ লাগাতে শুরু করেন তিনি। এখন মাসে তাঁর আয় কয়েক লাখ টাকা।
তবে রোজ গার্ডেন নামের এই নার্সারি জালাল তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। বলেছেন, গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি-দুটি করে চারা রোপণ করতে করতে পুরো একটা নার্সারিই গড়ে তোলেন। জালাল এখন আর চাকরি করেন না। চারা লাগান, কলম করেন, শিশু গাছকে পরম মমতায় বড় করে তোলেন। তিনি এখন পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা। জালাল বাংলাদেশের তরুণদের জন্য পথিকৃৎ হতে পারেন। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশে, সরকারি-বেসরকারি দুই-ই। সেখান থেকে পাস করে বেরিয়ে অনেকেই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁরাও এমন উদ্ভাবনী কাজের কথা ভাবতে পারেন। জালাল যে শুধু তরুণদের পথ দেখাতে পারেন, তা-ই নয়। তিনি প্রকৃতিপ্রেমীদেরও পরম সখা। গাছ লাগিয়ে, বিক্রি করে তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদক রাজবাড়ীতে জালাল সিকদারের নার্সারিতে গিয়ে দেখা পেয়েছেন ক্রেতাদের। একেকজনের একেক গাছের চাহিদা। কালুখালী উপজেলার গান্ধীমারা এলাকার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস ফলমূলের চারার জন্য আসেন। রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার মো. আবদুল জব্বার এসেছিলেন সস্ত্রীক। বাগানের জন্য লেবুগাছ কিনতে এসে প্রাকৃতিক নির্মল পরিবেশেও সময় কাটিয়ে গেছেন। জালাল জমি ইজারা নিয়ে মাল্টা চাষ করেছিলেন। এরপর তাঁর উপলব্ধি হলো মানুষ আসলে গাছকেই ভালোবাসে।
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু শিশুদের জন্য লিখেছিলেন ‘উদ্ভিদের জন্মমৃত্যু’ নিবন্ধটি। লিখেছিলেন, ‘গাছে ফুল ফুটিয়া রহিয়াছে দেখিলে আমাদের মনে কত আনন্দ হয়! বোধ হয়, গাছেরও যেন কত আনন্দ! আনন্দের দিনে আমরা দশজনকে নিমন্ত্রণ করি। ফুল ফুটিলে গাছও তাহার বন্ধু-বান্ধবদিগকে ডাকিয়া আনে। গাছ যেন ডাকিয়া বলে, “কোথায় আমার বন্ধু-বান্ধব, আজ আমার বাড়ীতে এস। যদি পথ ভুলিয়া যাও, বাড়ী যদি চিনিতে না পার, সে জন্য নানা রঙ্গের ফুলের নিশান তুলিয়া দিয়াছি। এই রঙ্গীন পাপড়িগুলি দূর হইতে দেখিতে পাইবে”।’
জালালের রোজ গার্ডেন নার্সারিও যেন বন্ধুবান্ধবদেরই ডাকে নিয়ত।