অভিযোগ বিস্তর: বরেন্দ্রর কৃষকেরা কি সহজে পানি পাবেন না

বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতাল কৃষকদের কাছে জমি ও ফসল একদিকে জীবিকার বিকল্পহীন অবলম্বন, অন্যদিকে গভীর আবেগের বিষয়। অথচ ‘গরিবের মধ্যে গরিব’ এসব কৃষকের জন্য অবহেলা ও বঞ্চনার সব আয়োজনই যেন পাকাপোক্তভাবে বিদ্যমান। সে কারণেই সেচের পানি না পেয়ে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী আমাদের হতে হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের সেই ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুললেও তাতে সরকারি কর্তৃপক্ষের ‘একচোখা’ নীতি যে খুব একটা পাল্টায়নি, তার পরিচয় পাওয়া গেল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গড়ডাইং গ্রামের ক্যাথরিনা হাঁসদাসহ অন্যদের ভাষ্যে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ৯ সেপ্টেম্বর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রাজশাহী নগরের সদর দপ্তরে বেসরকারি সংস্থা সিসিবিভিওর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় কৃষকেরা বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপারেটরদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আনেন। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে পানি নিতে গেলে অপারেটর দুই থেকে পাঁচ দিন ধরে ঘোরান। পানির সিরিয়াল দেওয়া হয় গভীর রাতে। আগে বাঙালি কৃষকদের পানি দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কৃষকদের দেরি করে পানি দেওয়া হয়। বাঙালি চাষিদের কাছে ১৫০ টাকা নেওয়া হলেও সাঁওতালদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ২০০ টাকা।

ভুক্তভোগী কৃষকদের আরও অভিযোগ হলো, সব গভীর নলকূপের কমিটি নেই। পানি দেওয়ার জন্য কোনো রেজিস্ট্রার খাতা ব্যবহার করা হয় না। বিএমডিএর কর্মকর্তাদের অভিযোগ করে কোনো ফল হয় না। ডাকলেও তাঁরা সময়মতো যান না।

বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের অভিযোগের সব কটিই গুরুতর। কেননা সিসিবিভিওর গবেষণা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৮৭ শতাংশ পরিবার ভূমিহীন, যাদের সবাই ভাগচাষি। মাত্র ১০ শতাংশের চাষের জমি থাকলেও তার পরিমাণ যৎসামান্য। ফলে ‘সবেধন নীলমণির’ মতো কৃষি ছাড়া তাদের অন্য কোনো অবলম্বন নেই। সময়মতো সেচের পানি না পেলে ফসলের উৎপাদন হয় কম, তাতে তাদের জীবন–জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে।

স্থানীয় প্রভাবশালী, সেচ অপারেটর ও বিএমডিএর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার কাছে বরেন্দ্রর প্রায় চার লাখ কৃষক জিম্মি হয়ে আছেন। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এই দায় এড়াতে পারে না। কৃষকেরা যখন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অভিযোগ তুলছেন, তখন ‘সব অপারেটরই স্বেচ্ছাচারী নন’ বলে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বরেন্দ্রঅঞ্চলেরকৃষকেরা, বিশেষকরেক্ষুদ্রজাতিসত্তারকৃষকেরাযাতেবঞ্চিতনাহন, সেজন্যগভীরনলকূপেরঅপারেটরদেরঅনিয়মতদারকিরমধ্যেআনতেহবে।অপারেটরহিসেবেতাঁদেরপ্রতিনিধিত্বওথাকতেহবে।