জেলেদের বঞ্চিত করে সিদ্ধান্ত নয়

সম্পাদকীয়

প্রান্তিক মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টার শেষ নেই। কিন্তু কোনো কোনো সময় সরকারেরই একেক কর্তৃপক্ষ এমন অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেয় যে দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় সেসব মানুষকে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ঝিনাইদহ ও যশোরের ছয়টি বাঁওড়ে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে।

১৯৭৯ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এ প্রকল্প শুরু করে মৎস্য মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির সুফলভোগী প্রায় এক হাজার হালদার বা জেলে পরিবার। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালনায় আছেন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বৃদ্ধি করে এখন পর্যন্ত সেটি চলছে।

কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের কী ইচ্ছা হলো, এর মেয়াদ আর বাড়াতে চায় না তারা। আবার এমনটি না যে প্রকল্পটি লাভজনক নয়, বরং জেলেদের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে সেটি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আমরা দেখি, ছয়টি বাঁওড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ ছাড়া হয়। প্রতিবছর মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, এই মাছের ৬০ শতাংশ সরকার, আর ৪০ শতাংশ জেলেরা পেয়ে থাকেন।

এ ছাড়া বাঁওড়ের পানিতে যে ছোট ছোট দেশীয় মাছ থাকে, তা সবই জেলেরা পেয়ে থাকেন। ফলে প্রকল্পটির মাধ্যমে একদিকে সরকার মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করছে, অন্যদিকে জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন করে যাচ্ছিল ৪০ বছর ধরে বাঁওড়ে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলো। এর মাধ্যমে অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন।

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল এই বাঁওড়গুলো নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চুক্তি শেষ হচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মৎস্য অধিদপ্তর আবেদন জানালেও এতে সায় দিচ্ছে না ভূমি মন্ত্রণালয়। তারা বরং বাঁওড়গুলো ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে বাঁওড়গুলোর ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করেছে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে এগুলোতে ইজারা প্রক্রিয়া চলমান।

বাঁওড়গুলো ইজারা দিলে এতগুলো জেলে পরিবার পথে বসবে, আর বাঁওড়ের জীববৈচিত্র্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে—এসব বিষয়ে কোনোভাবেই ভাবছে না ভূমি মন্ত্রণালয়।

এটি আমাদের বুঝে আসে না, কয়েক যুগ ধরে যে প্রকল্প লাভজনক এবং জেলে সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, সেটি কেন বন্ধ করে দিতে হবে? সংশ্লিষ্ট অনেকের ভাষ্য, বাঁওড়গুলোর ওপর প্রভাবশালী অনেকের নজর পড়েছে, তাঁরাই দেনদরবার করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে প্ররোচিত করেছেন।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষতি হবে, এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে বাঁওড়গুলোর জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা সুরক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেটি আমরা আশা করি। ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।