শিক্ষা বোর্ডের কি কোনো দায় নেই

সম্পাদকীয়

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার প্রায় ৮৬ শতাংশ বলে অনেকেই মন খারাপ করেছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন। এরপরও অনেক কলেজে পাসের হার শতভাগ, উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। 

এটি অবশ্যই আনন্দের দিক। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা বিপরীত চিত্রও দেখি। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি। গতবার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ৫টি। এক বছরে ৫ থেকে ৫০।

অধোগমনের মাত্রাটি কত প্রকট, সহজেই অনুমান করা যায়। অনেকে বলবেন, হাজার হাজার কলেজের মধ্যে ৫০টি খুব বেশি নয়। কিন্তু এসব কলেজ থেকে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।

আরও বিস্ময়কর হলো কেবল অজপাড়াগাঁ নয়, শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে খোদ রাজধানীর কলেজও আছে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির ফলাফলের তথ্য বলছে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৪টি ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ১৩টি, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ৯টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৮টি, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৬টি, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ৫টি ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩টি কলেজ রয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ৪টি মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন পরীক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি পেল কীভাবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই-বাছাই করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। তারা সেই কাজটি কি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করেছে, না ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষের প্রভাবে?

আবার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একবার স্বীকৃতি পেলেও সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো অবকাঠামো ও দক্ষ শিক্ষক আছে কি না, সেটা তদারক করাও শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্ব। এতগুলো কলেজে শূন্য পাসের ঘটনা প্রমাণ করে তারা সেই কাজটিও ঠিকঠাকমতো করেনি। ফলে অবস্থা হয়েছে, কাজির গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই।

শিক্ষা কার্যক্রম একটি নিবিড় পরিচর্যার বিষয়। এখানে বিরতি বা গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। দেশে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু সেই ব্যবসা তো শিক্ষাকে বাদ দিয়ে হতে পারে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এখন নিজস্ব জমি ও অবকাঠামো ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নেই। কিন্তু মালিবাগের যে কলেজ থেকে এ বছর একজন পরীক্ষার্থীও পাস করে বের হতে পারেননি, সেটি চলছে একটি ভাড়াবাড়িতে। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে সেই কলেজ কী করে অনুমোদন পেল? এভাবে সারা দেশে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে, তার হিসাব নেই।

শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। আমরা আশা করব, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ-সুবিধা নেই, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণ নেই, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি স্থগিত বা বাতিল করতে হবে। প্রয়োজনে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোথাও ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে, তাদের বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে।