ঢাকা ওয়াসা দায় এড়াবে কীভাবে

সম্পাদকীয়

ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ৩৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সমবায় অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সমিতির বিভিন্ন পদে থাকার সময় তাঁরা এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসার সিবিএর সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজ উদ্দিন একাই আত্মসাৎ করেছেন ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, উল্লিখিত অর্থ ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির আয়ের উৎস গ্রাহকের বিল থেকে পাওয়া কমিশন। ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য ১৯৯৬ সাল থেকে পানির বিল আদায়ের কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়। ‘প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট (পিপিআই)’ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে।

এর বিপরীতে তারা মোট বিলের ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে পেত। ব্যয় মেটানোর পর ঢাকা ওয়াসা থেকে কমিশন বাবদ পাওয়া উদ্বৃত্তের সুবিধাভোগী হওয়ার কথা সমিতির সাধারণ সদস্যদের। কিন্তু তাঁদের বঞ্চিত করে ব্যবস্থাপনা কমিটির ওই ৪৬ জন কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্তে উঠে আসে।

অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমে স্পষ্ট যে অর্থ লোপাট করাই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী সমিতির নামে। অথচ তা পরিচালনা করেন পিপিআই (সমিতির অধীনে নেওয়া একটি প্রকল্প) পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তদন্তে যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন, কেউ কেউ অবসরে চলে গেছেন। বাকিরা ওয়াসায় কর্মরত আছেন। যাঁরা অবসরে গেছেন এবং যাঁরা ওয়াসায় এখনো কর্মরত, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া গেলেও উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যায়।

এই আত্মসাতের দায় ওয়াসা কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না। ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পান। গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল তোলার জন্য বেতনভুক কর্মচারীদের কেন ১০ শতাংশ হারে কমিশন দেওয়া হবে? এর অর্থ সমিতির কর্মকর্তারা গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ টাকা বিল তুললে ৯০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। বাকিটা সমিতির তহবিলে চলে গেছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে পারে কি না, সেটা নৈতিকতার প্রশ্ন। কিন্তু সেই সুবিধাও সমিতির সাধারণ সদস্যদের না দিয়ে কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেছেন। এ ধরনের আত্মসাৎ কিংবা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যথায় সংক্রামক ব্যাধির মতো এ ধরনের ঘটনা অন্যান্য সরকারি অফিসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে কর্মচারী সমিতিকে বিল তোলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছে, তাদের আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ভুল সিদ্ধান্তের কাফফারা কেন জনগণ দেবে? অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হোক।