ভোলা সদর উপজেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

বছরের সিকি ভাগ চলে যাচ্ছে, অথচ অনেক জায়গায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের বই পৌঁছেনি। বই ছাড়াই প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে, আর ফিরে আসছে বিরস বদনে। বছরের শুরুতেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের হাতে পৌঁছে গেছে বিনা মূল্যের বই।

লাখ লাখ শিশু নতুন বইয়ের প্রাপ্তিতে আনন্দে মেতেছে। কিন্তু এখনো অনেক শিশু সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তাদের মধ্যে আছে ভোলা সদর উপজেলার ২০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী। এত দিন হয়ে গেল, কিন্তু তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথাই নেই, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বারবার আশ্বাস দিলেও বই আসেনি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। বছরের শুরু থেকে শিশুরা যদি বিদ্যালয়মুখী না হয়, তাহলে তাদের ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, ঝরে পড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।

ভোলা সদর উপজেলার বিদ্যালয়গুলোয় তেমনই দেখা যাচ্ছে। বিনা মূল্যের বই বিতরণ করাই হয় শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে, ঝরে পড়া রোধ করতে, তার মানে শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে; সেখানে বই না পেয়ে যদি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার কমে যেতে থাকে, তা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়।

কিছু বই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হলেও সেগুলোর সংখ্যা এতই কম যে সব শিক্ষার্থীকে বিতরণ করা যাচ্ছে না। সেটি করতে গেলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হবে বলে ধারণা শিক্ষকদের। এখন বই ছাড়া বিদ্যালয়গুলো কীভাবে চলছে? অভিভাবকেরা বলছেন, বই না দেওয়ায় শিক্ষক ক্লাসে হাজিরা ডেকে চলে যান। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে বাসায় ফিরে আসে। বই না দেওয়ায় তেমন ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষকেরা জানান, বই না দেওয়ায় বছরের শুরু থেকেই ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। রোজার সময় আরও কমেছে।

এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি হওয়া মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল হওয়ায় ভোলা সদর উপজেলাসহ অনেক জায়গায় এখনো বই আসেনি, বিতরণও হয়নি।

বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানোর পর তাঁরা খুলনা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বই সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। রোজার পরই বই বিতরণ করা হবে।

কিন্তু সে কাজটি এত দিনেও কেন করা গেল না? রোজার পর এসব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে আরও কত দিন সময় লাগে, সেটিই এখন প্রশ্ন। এখানে কি স্পষ্ট অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার প্রকাশ ঘটেনি? ভোলার এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বই পৌঁছে দেওয়া হোক।