সংযোগ সড়ক দিন, দ্রুত চালু করুন

সম্পাদকীয়

‘সেতু চুপে শুয়ে আছে, সেতু শুয়ে আছে তার ছায়ার উপরে’—বিনয় মজুমদারের ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’ কবিতার এই লাইনের চিত্রকল্পের বাস্তব চেহারা নিয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়কের রাজাপুর এলাকায় এক বছর ধরে ‘শুয়ে আছে’ ৩২ কোটি টাকার একটি সেতু। এই এক বছরেও সেই সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক বসেনি। ফলে ‘দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি’। এ কারণে ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’ অবস্থা সেখানে নেই।

স্থানীয় মানুষ সেতুর এক প্রান্তে ৫০ ফুট এবং অন্য প্রান্তে ৩০ ফুটের সুউচ্চ বাঁশের মই বসিয়েছেন। যাঁদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো, তাঁরা পর্বতারোহণের অনুভূতি নিয়ে মই বেয়ে সেতুতে উঠছেন, তারপর অতিসতর্কতায় অন্য প্রান্তের মই বেয়ে নামছেন।

রূপকথার গল্পে শিয়াল তার বন্ধু সারসকে দাওয়াত করে চ্যাপটা থালায় পানির মতো পাতলা পায়েস খেতে দেওয়ার পর লম্বা ঠোঁট নিয়ে সেই পায়েস খেতে গিয়ে সারসের যে দশা হয়েছিল, স্থানীয় মানুষের কাছে এই সেতুর ব্যবহার অনেকটা সে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বলেছেন, সওজ অধিদপ্তর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠাতে দেরি করেছে।

এখন বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এক বছর আগে যেখানে সেতুর কাজ শেষ হয়ে গেছে, সেখানে এখন সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। সরকারি কর্মকর্তারা এর ন্যায্যতার পক্ষে নানা ব্যাখ্যা দিতেই পারেন। কিন্তু সাধারণ বিবেচনাবোধ বলবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও সঠিক ভাবনার অভাবেই আজকের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।

প্রায় সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ সম্ভব হচ্ছে না। এটি স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন।

সওজের কুলাউড়া কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, সংযোগ সড়কের জন্য মোট ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। যেহেতু আলোচ্য সেতুটি তৈরি হয়ে গেছে, সেহেতু তা ব্যবহারযোগ্য করতে দ্রুত সংযোগ সড়ক তৈরি করা দরকার। আর যদি জমি অধিগ্রহণে আরও অনেক সময় লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সেতুটিতে বিদ্যমান মইয়ের একটি কম ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি।