রেলপথ ও সড়ক উদ্যানের বাইরে নিন

সম্পাদকীয়

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে যাওয়ার পর কেউ হতাহত হয়নি—এই আপাত–স্বস্তির আড়ালে যে জোরালো উদ্বেগের বিষয় চাপা পড়ে যাচ্ছে, তা নিরসনে অনেক আগে থেকেই পরিবেশবাদীরা রেলপথ ও সড়কপথকে লাউয়াছড়া উদ্যানের বাইরে আনার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন, এখনো আছেন।

উদ্যানের মধ্য থেকে রেলপথ সরানোর বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত আগ্রহ না দেখালেও পরিবেশবাদীদের দাবি মেনে তারা সড়কপথ বাইরে নেওয়ার বিষয়ে কিছু দূর এগিয়েছে। অস্বস্তির কথা, সরকারের সড়ক সরানোর সেই প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য থমকে গেছে এবং ট্রেন–সংক্রান্ত সংকট আগের মতোই আছে।

এই সংকটের সর্বশেষ খেসারত দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী একটি ট্রেন শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে লাইনচ্যুত হয়েছে। এরপর দীর্ঘ সময় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

এই বনের ভেতর দিয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক। রেল ও সড়কপথের দুই পাশে উদ্যান। বন্য প্রাণীরা সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে আসা-যাওয়া করে। রাতে তারা বিচরণ করে বেশি। তখন দ্রুতগামী যানবাহন এবং ট্রেনের নিচে পড়ে বন্য প্রাণী মারা পড়ে।

মাঝে মাঝে টিলাধস বা ঝড়ের কারণে বড় বড় গাছ ভেঙে ট্রেনলাইনের ওপর পড়ে। উদ্যানের ভেতর যখন প্রথম রাস্তা তৈরি হয়, তখন এত যানবাহন ছিল না। রাস্তাও এত মসৃণ ছিল না। এখন প্রতিদিন শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে ২০০ থেকে ৩০০ ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। এসব যানের চাকায় বহু প্রাণী পিষ্ট হচ্ছে। ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে অনেক বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে।

বিষয়টি পরিবেশবাদীরা সরকারের নজরে আনার পরও ট্রেনলাইন সরানোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নীরব আছে। কিছুদিন আগে সরকারের দিক থেকে লাউয়াছড়া উদ্যানে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে খবর বের হলেও এখন পর্যন্ত সে–সংক্রান্ত কোনো লিখিত নির্দেশ হাতে পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় রেল কর্মকর্তারা বলছেন।

তবে এত কিছুর মধ্যে, ‘সিলেট বিভাগের সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প নামের ১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। এই প্রকল্পে ‘লাউয়াছড়া বাইপাস সড়ক’ অন্তর্ভুক্ত আছে।

কিন্তু এই সড়ক নির্মাণের বিষয়টি দুই বছর ধরে আটকে আছে। সেই কাজ দ্রুত শুরু করা দরকার। অন্যদিকে রেললাইনকেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বনের বাইরে সরিয়ে নেওয়া উচিত।