স্থানীয় মানুষের চলাচলে কোনো বাধা নয়

সম্পাদকীয়

জলাবদ্ধতা এখন জেলা–উপজেলা শহরের সমস্যা হয়ে উঠেছে। এর সমাধানে নদী ও খাল রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেটি করার একটি উপায় হতে পারে সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে নদী বা খালের দুই পাড়কে জনপরিসরে পরিণত করা। ইতিমধ্যে কিছু জায়গায় এমন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। যশোরের কেশবপুরে কপোতাক্ষ নদ ঘিরেও চলছে এমন একটি কার্যক্রম। তবে সেখানে স্থানীয় মানুষের সমালোচনার মুখে পড়েছে কার্যক্রমটি। কারণ, খালসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারীদের চলাচলের জন্য কোনো পথ রাখা হচ্ছে না সেখানে।

‘তীর প্রতিরক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প’ নামে কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষে প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নদের তীররক্ষা, হাঁটাপথ ৫০০ মিটার, দুটি ঘাট, একটি শৌচাগার, বসার বেঞ্চ এবং বৃক্ষরোপণ ও বাতি স্থাপন। ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গত বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের বর্ণনাই বলে দিচ্ছে এটি একটি জনবান্ধব কার্যক্রম। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে নদী দখল ও দূষণ ঠেকানোও সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। এটি অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় প্রকল্প।

প্রকল্পটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ৩৮৮ মিটার সীমানাপ্রাচীর। এটি নিয়েই মূলত স্থানীয়দের আপত্তি। কারণ, এ সীমানাপ্রাচীর এমনভাবে দেওয়া হচ্ছে যে নদের তীরে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কৃষিজমি, ফলের বাগান ও খামারে যেতে পারছে না লোকজন। ফলে এ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এখন এলাকার মানুষের ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগী মানুষ যাতায়াতের জন্য গেট নির্মাণ করার দাবিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক, পাউবো তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কেশবপুরের পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, নকশা তৈরির সময় পকেট গেট নির্মাণের কথা না ভাবাটা ভুল ছিল। তবে তাঁরা উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছেন। অন্তত দুটি পকেট গেট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাউবোর এই কর্মকর্তার বক্তব্যে এটি প্রতীয়মান যে এ প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই–বাছাই করা হয়নি। ফলে স্থানীয় মানুষকে সমস্যায় ফেলার মধ্য দিয়ে এ প্রকল্পের সুফল পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। তবে পাউবোর যে এ ব্যাপারে বোধোদয় হয়েছে, এর জন্য তাদের আমরা সাধুবাদ জানাই। স্থানীয়দের দাবি অনুসারে সেখানে উপযুক্তসংখ্যক পকেট গেট বা চলাচলের রাস্তা রাখা হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।