শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে দায় নিতে হবে

সম্পাদকীয়

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী জন যেফানিয়া হলওয়েল একটা গল্প ফেঁদেছিলেন। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ভেতর জানালাহীন একটি কামরায় ১৭৫৬ সালে তাঁকেসহ ১৪৬ জনকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।

তাতে মারা গিয়েছিলেন ১২৩ জন। এ নিয়ে একটা বইও লিখেছিলেন তিনি। যদিও এর সত্যতা নিয়ে পরে প্রশ্ন ওঠে। অতটুকু কামরায় বই যেভাবে তাকে রাখা হয়, সেভাবে মানুষকে সাজিয়ে রাখলেও আঁটানো যেত না—এমনই মত দিয়েছিলেন ঐতিহাসিকেরা।

তবে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার কোরবানিগঞ্জ এলাকার এক ভবনে যেভাবে পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আঁটানো হয়েছে, তাতে ভ্রম হয়, কর্তৃপক্ষ হলওয়েলের অন্ধকূপের মঞ্চায়ন চাইছে কি না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ সালের শেষ দিকে কোরবানিগঞ্জ এলাকায় বলুয়ারদীঘি সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং লামাবাজার আছদ আলী সওদাগর সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

এ দুই বিদ্যালয়ের ভবনে বলুয়ারদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং লামাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও ক্লাস হতো। ভবন ভেঙে ফেলায় ২০১৮ সাল থেকে এই চার প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম চলছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কায়সার-নিলুফার কলেজ ভবনে। ৫০ থেকে ৬০ জনের শ্রেণিকক্ষে এখন ৯০ জন পর্যন্ত বসছে, সিঁড়ির মুখেও বেঞ্চ ফেলতে হয়েছে। শৌচাগারের তীব্র সংকট। অথচ সাড়ে পাঁচ বছরে নতুন ভবন নির্মাণে মাত্র পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজের তদারকি করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকারের কথায় যেটা বোঝা গেল, তা হলো গত পাঁচ বছরে স্কুলগুলোর নিচতলা নির্মাণের দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি। তিনি অবশ্য নিজের ঘাড়ে দায় রাখতে চাননি। বলেছেন, ২০২১ সালের শেষ দিকে দায়িত্ব নিয়েছেন। যদি তিনি ওই বছরের ডিসেম্বরেও দায়িত্ব নিয়ে থাকেন, তাহলেও তিনি চেয়ারে আছেন ৫৬০ দিন। এত দিনেও কেন একটা দরপত্র আহ্বান করতে পারেননি, সে প্রশ্নের জবাব কি তিনি দেবেন?

সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের বক্তব্যও অসংবেদনশীলতার চূড়ান্ত প্রকাশ। প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভবনটি নোংরা এবং জায়গায় জায়গায় পানি জমা। ডেঙ্গুতে মৃত মানুষের সংখ্যা দেশে এ বছর ১০০ ছাড়িয়েছে, যার একটা বড় অংশই শিশু। আর তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা জারি আছে, চট্টগ্রামের এ ঘটনা তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যদি সমাজের উঁচুতলার লোকজনের সন্তানেরা পড়ত, তাহলেও কি এই বছরের পর বছর শিশু-কিশোরদের এমন মানবেতর পরিবেশে লেখাপড়া করতে হতো? এই প্রশ্নের উত্তর আছে কারও কাছে?