হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করুন

সম্পাদকীয়

গত বৃহস্পতিবারের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে অন্ধকারময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোডেইলি স্টার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো কার্যালয়ে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়টি ভাঙচুর, লুটপাটের পর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একই রাতে কুষ্টিয়া, খুলনা ও সিলেটে প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশাল কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা করা হয়। শুধু গণমাধ্যম নয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচীও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়। 

প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার কারণে ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতা ও জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। সাংবাদিকেরা প্রাণ রক্ষায় দ্রুত কার্যালয় ত্যাগ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার প্রথম আলো ছাপা পত্রিকা প্রকাশ করা যায়নি। অনলাইন সংস্করণের কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে হয় ১৭ ঘণ্টা। ডেইলি স্টার–এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।

এই সন্ত্রাসী হামলায় প্রথম আলোডেইলি স্টার-এর শুধু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, সাংবাদিক ও কর্মীদের জীবনও হুমকির মুখে পড়েছিল। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হয়। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকেও লাঞ্ছিত করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রথম আলোডেইলি স্টার–এর ওপর হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে কেউ কেউ যে চেষ্টা করেননি, এমনটা নয়; কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এমন সহিংসতা ঘটতে পেরেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মব সহিংসতা দমনে সরকার কার্যকর কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি এবং তা অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এসব সহিংসতা সরকারের কোনো অংশের প্রশ্রয় পেয়েছে। প্রথম আলোডেইলি স্টার-এর ওপর হামলার সময়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে একইভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। গত বছরের নভেম্বর মাসেও প্রথম আলো ডেইলি স্টার–এর কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত ভূমিকায় সেই চেষ্টা নস্যাৎ হয়েছিল। আমাদের প্রশ্ন, এবার কেন সেই ভূমিকা নেওয়া গেল না?

অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে প্রথম আলো ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিকদের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেছে, ‘আপনারা যে সন্ত্রাস ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত।’ শুধু কথায় ও বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমের পাশে থাকার ও স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়, কাজেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার-এর বিরুদ্ধে নানা গোষ্ঠী প্রকাশ্যে সহিংসতার উসকানি দেওয়া সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এখন সরকারের কাজ হচ্ছে যথাযথ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে প্রথম আলো ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার উসকানিদাতা ও পরিকল্পনাকারীসহ হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা। আমরা মনে করি, সহিংস আক্রমণের উসকানি যারা দিয়েছে এবং যারা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য ভিডিও ও ছবিতে সুস্পষ্টভাবে তাদেরকে দেখা যাচ্ছে। উসকানিদাতাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্যেরও অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কোনো গাফিলতি দেখতে চাই না।