রাজশাহী নগরের ড্রেন পরিষ্কারের নামে যে চর্চা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তা শুধু অদক্ষ ব্যবস্থাপনার উদাহরণ নয়; এটি একধরনের নীরব জনস্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রথম আলোর খবরে এসেছে, রাজশাহীর সড়কে ড্রেনের কাদা, ধুলায় মিশছে ভয়ংকর জীবাণু। ড্রেনের কাদা তুলে দিনের পর দিন রাস্তার ওপর ফেলে রাখা, সেটি শুকিয়ে ধুলায় পরিণত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা, তারপর আবার নর্দমায় ফেলে দেওয়ার প্রক্রিয়া কোনোভাবেই আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এটি একটি শহরকে ধীরে ধীরে অসুস্থ করে তোলার নিশ্চিত পথ।
এবার এই ধুলা শুকানোর আগেই নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় রাস্তার ওপরে তুলে রাখা কাদার ওপরে দুটি কলাগাছ লাগিয়ে দিয়েছেন কেউ। কাদার স্তূপের ওপর দুটি কলাগাছ রোপণের ঘটনা আপাতদৃষ্টে রসিকতা মনে হলেও, এর ভেতরে গভীর প্রতিবাদী বার্তা লুকিয়ে আছে। যিনি এই কাজ করেছেন, তিনি নিশ্চয়ই জানতেন কাদা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে গাছও উঠে যাবে। তবু এই প্রতীকী কর্মের মাধ্যমে তিনি নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অযৌক্তিক ব্যবস্থার দিকেই আঙুল তুলেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি শহরের মানুষ কি এভাবেই নিজেদের প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হবে।
ড্রেনের পানিতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য, মানববর্জ্যসহ নানা রোগজীবাণু মিশে থাকে। কলিফর্ম, সালমোনেলা, ই-কোলি ও সিগেলার মতো ব্যাকটেরিয়া শুধু পানিবাহিত রোগ নয়, বাতাসে মিশে শ্বাসতন্ত্রের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। এই কাদা শুকিয়ে ধুলা হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে তা অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অথচ রাজশাহী একসময় নির্মল বাতাসের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। আজ সেই শহরেই বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। এটি নিছক কাকতাল নয়।
সিটি করপোরেশনের যুক্তি, ছোট ড্রেনে এক্সকাভেটর ব্যবহার করা যায় না, তাই বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি কোনো বিকল্প নেই, নাকি বিকল্প খোঁজার সদিচ্ছার অভাব আছে। কাভার্ড ট্রাক ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে বর্জ্য অপসারণ, পলিথিন বা ঢাকনা দিয়ে কাদা ঢেকে রাখা কিংবা ছোট ড্রেনের জন্য উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জাম ব্যবহারের মতো সমাধান কোনো অজানা বিষয় নয়।
একটি শহরের সৌন্দর্য শুধু পরিচ্ছন্ন রাস্তায় নয়, মানুষের সুস্থতায়ও প্রতিফলিত হয়। রাজশাহীর মতো একটি শহরে যদি নাগরিকদের প্রতিদিন রোগজীবাণু ও ধুলার মধ্যে চলাচল করতে হয়, তবে সেই উন্নয়ন অর্থহীন। আমরা আশা করি, নগর কর্তৃপক্ষ ড্রেনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবিলম্বে বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করে রাজশাহীকে জনস্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।