অর্থহীন নির্বাচন কারও কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

গত বুধবার দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবু হেনা বলেছেন, নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, তাহলে সে নির্বাচন অর্থহীন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। তাদের কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ।

সাবেক ইসির এই বক্তব্য নতুন নয়। এর আগেও অনেকে বলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের সমস্যা হলো, তাঁদের যা বিপক্ষে যায়, সেটা নিতে চান না। পক্ষে গেলে সাদরে বরণ করেন। নির্বাচন মানেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক ভোট।

‘নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করা’—উল্লেখ করে আবু হেনা বলেন, নির্বাচন কমিশনে যাঁরাই থাকুন, তাঁদের নিজেদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব
সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জনগণের কাছে তাঁদের দায়বদ্ধতা আছে। ইসি নিজেদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা ও তাঁর সহযোগী দুই কমিশনার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বর্তমান বাস্তবতায় সেটি সম্ভব না হলেও গণতন্ত্রের জন্য একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তো বিকল্প নেই। আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন ছিল না। একাদশ জাতীয় সংসদে আইন পাসের পরই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমাদের বিবদমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচন কমিশনসহ যেকোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধিতা থাকবে, আছে। এই বাস্তবতা মেনেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাতে হবে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যেসব বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে, ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনকে তার চেয়ে কম বিরোধিতায় পড়তে হয়নি। আলোচনার মাধ্যমেই তারা সেটি উতরে গিয়েছিল এবং সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও দেশবাসীকে উপহার দিয়েছিল।

কেবল সাবেক সিইসি নন, বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও সম্প্রতি বরিশালের একটি আলোচনা সভায় বলেছেন, বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। এরপরও কেন তিনি বিএনপিকে আর সংলাপে আমন্ত্রণ জানাবেন না বলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে দিলেন, আমাদের বোধগম্য নয়।

কমিশনের লক্ষ্য যদি হয় সুষ্ঠু নির্বাচন, সেটি সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে যে সাহসী পদক্ষেপ কমিশন নিয়েছে, তাতে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা অনেকখানি বেড়েছে। কমিশনকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে, তারা একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়।  

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সত্যিকার অর্থে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এর বাইরে যা হবে, সেটি সাবেক সিইসির ভাষায় অর্থহীন নির্বাচন। বিএনপির আরেকটি দাবি ছিল, ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না। সিইসি বলেছেন, সরকার ইভিএম কেনার টাকা না দিলে ৭০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। বাকিগুলো ব্যালটে; অর্থাৎ সিইসির বক্তব্য বিএনপির দাবির কাছাকাছি চলে এসেছে। 

উল্লেখ্য, বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে যে ২৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছে, তাতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল বা পুনর্গঠন করার কথা নেই। আছে নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনের কথা।

এটাকেও ইতিবাচকভাবে দেখতে পারেন ইসির পদাধিকারীরা। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আলোচনার পথ একেবারে বন্ধ করা ঠিক হবে না। বিএনপি বা তার সহযাত্রীরা আসুক বা না আসুক, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আলোচনার দরজা খোলাই রাখতে হবে।