আইনজীবী সমাবেশে হামলা: লাঠিপেটা নয়, শান্তি রক্ষাই পুলিশের কাজ

সম্পাদকীয়

ঢাকা জজকোর্ট এলাকায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা এবং যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন, তঁাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ঘটনাটি যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি সফল করতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের ব্যানারে ঢাকা বার ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। এরপর আইনজীবীরা আদালতের সামনের প্রধান সড়কে এলে পুলিশ বাধা দেয়।

একপর্যায়ে আইনজীবীরা পুলিশি বাধা অতিক্রম করে প্রধান সড়কে আসার চেষ্টা করলে প্রথমে সাদাপোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা লাঠিপেটা করেন। এর জবাবে কয়েকজন আইনজীবী ফেস্টুনের লাঠি দিয়ে পুলিশকে আঘাত করলে তারা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এতে ৩০ জন আইনজীবী আহত হন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন নারী আইনজীবীও ছিলেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে মূল সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ধাওয়া দেয়। আইনজীবীদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের চারজন সদস্য আহত হন। অন্যদিকে ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের আইনজীবীরা বলেছেন, তাঁরা স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। এ সময় সাদাপোশাকধারী দু–তিনজন পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর অতর্কিত লাঠিপেটা শুরু করেন।

পুলিশ আইনের রক্ষক, তাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার বদলে অশান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। আইনজীবীদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে দিলে কোনো ক্ষতি হতো না। কর্মসূচি পালন করে তাঁরা বাড়ি বা আদালত প্রাঙ্গণে চলে যেতেন। শহরের ব্যস্ত সড়কে রাজনৈতিক বা পেশাজীবীদের কর্মসূচি পালিত হলে যাত্রীসাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়েন—এই সত্য মেনে নিয়েও বলব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাস্তবতার নিরিখে।

অতীতে আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি অফিসের সামনে এবং বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে মাসের পর মাস পুলিশি বেষ্টনী দেখেছি। এর উদ্দেশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, বিরোধী দলকে ভয় পাইয়ে দেওয়া। এখনো আমরা সেই ভয় পাইয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি।

বছরখানেক আগে পর্যন্ত বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হতো না। যেকোনো কর্মসূচি ঘিরে চারপাশে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা’ চলত। এমনকি আশপাশের হোটেলে হানা দিয়ে পুলিশ বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের খুঁজত। তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আবার  বর্তমানে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ায় জনজীবনে শান্তি বিঘ্নিত হয়নি। শান্তিপূর্ণ সভা–সমাবেশ করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে পারে না। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের স্থলে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা অনুরূপ কর্মসূচি নিলে কি পুলিশ বাধা দিত?

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ অবস্থায় সব পক্ষের কাছে সহনশীল ও সংযত আচরণ প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা যেসব দাবি নিয়ে সমাবেশ করেছেন এবং স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলেন, সেগুলোর সঙ্গে সর্বজনীন ভোট ও মানবাধিকারের বিষয়টি জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা আইন রক্ষার নামে এমন কিছু করতে পারে না, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মনে রাখতে হবে, লাঠিপেটা নয়, শান্তিরক্ষাই তাদের কাজ।