চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার তুঘলকি কাণ্ড

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ থাকলেও সেখানে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপি বা বর্জ্য পরিশোধনাগার ঠিকই নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে, ইটিপির যন্ত্রপাতি আগেই আনা হয়েছিল।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, কারখানায় আখ থেকে চিনি তৈরি করতে গিয়ে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয়, তা দূষণমুক্ত করতে ইটিপি বা বর্জ্য পরিশোধনাগারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন ইটিপি বসিয়েছে বন্ধ তিনটি কারখানায়। এতে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। বন্ধ চিনিকলে এত টাকা খরচ করে ইটিপি বসানো হয়েছে কার স্বার্থে?

ইটিপি বসানো চিনিকল তিনটি হলো দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস লিমিটেড, পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেড এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগার মিলস লিমিটেড। জানা গেছে, ইটিপি বসাতে সেতাবগঞ্জে ৮ কোটি, পঞ্চগড়ে প্রায় ৬ কোটি ৮ লাখ এবং রংপুর চিনিকলে প্রায় ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এগুলোতে ইটিপি বসানোর কাজ ২০২২ সালে সম্পন্ন হয়। নির্মাণ শেষ হলেও এই তিন চিনিকলে ইটিপি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।

এ ছাড়া বাকি বন্ধ তিনটি চিনিকলে ইটিপির যন্ত্রপাতি আনা ও নির্মাণকাজ আংশিক করে বাতিল করা হয়েছে। এগুলো হলো যথাক্রমে পাবনা সুগার মিলস লিমিটেড, রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড এবং কুষ্টিয়া সুগার মিলস লিমিটেড। এর মধ্যে পাবনা চিনিকলে ইটিপি স্থাপনের জন্য ৪০ ভাগ অবকাঠামো নির্মাণের পর কাজ বাতিল করে দেওয়া হয়।

এই অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়। এর বাইরেও ইটিপির যন্ত্রপাতি এখন পাবনা চিনিকলের গুদামে রয়েছে। তবে ইটিপির যন্ত্রপাতি কিনতে কত খরচ হয়েছে, সেই হিসাব নেই পাবনা চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ৮৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪টি চিনিকলে ইটিপি স্থাপন প্রকল্প শুরু হয়। এর মধ্যে ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এই ছয়টির মধ্যে তিনটিতে পুরোপুরি ও বাকি তিনটিতে আংশিক ইটিপি বসানো হয়।

যেখানে চিনিকলই চালু নেই, সেখানে ইটিপি বসানোর যৌক্তিকতা কী। এ ক্ষেত্রে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান যুক্তি দেখিয়েছেন, তা–ও ধোপে টেকে না। ইটিপি আনা হয়েছে সংস্থার সিদ্ধান্তে, চিনিকল বন্ধও হয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। উল্লিখিত চিনিকলগুলো চালু না হলে ইটিপি কোনো কাজে লাগবে না। বরং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা জোগান দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার তুঘলকি সিদ্ধান্তের দায় কেন জনগণ ভোগ করবে?

এসব ইটিপি বসানোর পর বছরের পর বছর অলস বসে থাকলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে। সে ক্ষেত্রে হয় চিনিকলগুলো দ্রুত চালু করতে হবে অথবা ইটিপি অন্য কোনো কারখানায় হস্তান্তর করতে হবে।

লোকসানের দোহাই দিয়ে চিনিকলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা অনেকটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার শামিল। যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে উচ্চ মূল্যে চিনি আমদানি করা হচ্ছে, সেখানে বন্ধ চিনিকলগুলো কেন চালু করা হবে না?  ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক বন্ধ চিনিকলে ইটিপি বসানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। আমরাও মনে করি, এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।