বিআইডব্লিউটিএর ঘুম ভাঙবে কবে

সম্পাদকীয়

দেশে আবারও একটি তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনা ঘটল। ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটিতে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ছিল। কোস্টগার্ড কয়েকটি নিষ্কাশনযন্ত্র দিয়ে প্রায় এক হাজার লিটার তেল উদ্ধার করেছে। বাকি ডিজেল নদী ও সাগরে ভেসে গেছে। এর ফলে জলজ প্রাণী ও শ্বাসমূলীয় বনের উদ্ভিদ চরম ক্ষতির মুখে পড়ে গেল। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরেও জাহাজটি উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত শনিবার পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তেল নিয়ে ‘ওটি সাগর নন্দিনী-২’ নামে ট্যাংকারটি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পরদিন ভোরে ট্যাংকারটি অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খায় বলে দাবি মাস্টারের।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, ভোরে এ ঘটনা ঘটায় এবং সে সময় কুয়াশা থাকায় জাহাজে ধাক্কা খাওয়ার বিষয়টি তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না। এ কারণে ট্যাংকারটির তলা কী কারণে ফেটে গিয়েছে, সেটির জন্য প্রাথমিকভাবে মাস্টারের বক্তব্যের ওপর আমাদের ভরসা রাখতে হচ্ছে। আসলেই কী ঘটেছে, সেটি এখন তদন্ত সাপেক্ষ। এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি ও বিআইডব্লিউটিএ আলাদাভাবে দুটি কমিটি গঠন করেছে

পদ্মা অয়েল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এসএইচআর নেভিগেশন কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির তেলবাহী জাহাজ ছিল ট্যাংকারটি। আমরা আশা করব, নেভিগেশন কোম্পানিটি তাদের চুক্তি কতটা মেনে চলেছে, তদন্তে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

তা ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানাচ্ছে, সাগরের মোহনাটি সামুদ্রিক আইনের অধীন। এ আইন অনুসারে, কুয়াশা দেখা দিলে জাহাজ চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে ট্যাংকারটি আইন লঙ্ঘন করেছে বলা যায়। তদন্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এদিকে ৩২০ মেট্রিক টন ওজনের ট্যাংকারটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএর সক্ষমতা নেই। ফলে বেসরকারি সহযোগিতা নিতে হচ্ছে বলে উদ্ধার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।

দেশে দেড় হাজার টনের বেশি সক্ষমতার নৌযানও চলাচল আছে। অথচ বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজের সর্বোচ্চ উত্তোলনক্ষমতাই হচ্ছে ২৫০ টন। বিষয়টি নিয়ে গত বছর আমরা একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলাম।

নৌযানের আকার এবং নৌপথের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নতুন উদ্ধারকারী জাহাজ কেনার জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে আহ্বান করেছিলাম। বোঝাই যাচ্ছে, বিআইডব্লিউটিএ বিষয়টিতে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। এবারের ঘটনার পর তাদের ঘুম ভাঙবে কি, নাকি আরও বড় কোনো নৌ দুর্ঘটনার জন্য তারা অপেক্ষা করবে?