বড় দুর্ঘটনার আগেই ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

মহামারি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দাবদাহ—সব ধরনের দুর্যোগ বা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আমাদের কৃষকেরা খাদ্য উৎপাদন করে যাচ্ছেন। কৃষকদের এই অনন্য ভূমিকার কারণে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের এখনো খাদ্যসংকটে পড়তে হয়নি।

গত বছর ভয়াবহ বন্যা দুশ্চিন্তা তৈরি করলেও এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন বেশ স্বস্তিদায়ক। গ্রামে গ্রামে ধান কাটা ও ধানমাড়াইয়ের উৎসব চলছে। তবে ধানমাড়াইয়ের কাজের জন্য অনেকে বেছে নিচ্ছেন সড়ককে।

এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ধানমাড়াই ও শুকানোর কারণে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা নতুন নয়। ফলে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জামালপুর-মাদারগঞ্জ মহাসড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশে চলছে ধানমাড়াইয়ের কাজ। ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে জামালপুর জেলা শহর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও মাদারগঞ্জ হয়ে নৌপথে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে মানুষ। মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থান দখলে নিয়ে ধান ও খড় শুকানোয় নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে, ধানের ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে অটোরিকশা চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। খড়ের ওপর মোটরসাইকেল ব্রেক করলেই চাকা পিছলে যায়।

একইভাবে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-দহগ্রাম আঞ্চলিক সড়কেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সড়কটির ১৭ কিলোমিটারে রয়েছে ৪১টি বাঁক। এ কারণে এমনিতেই এই সড়কে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ভুট্টা ও খড় শুকানোর কারণে সড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। শেরপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কেও এভাবে ধান ও খড় শুকানো হচ্ছে।

কৃষকদের বক্তব্য, বাড়িতে ধানমাড়াই বা খড় শুকানোর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাঁরা সড়কেই সে কাজ সারছেন। কিন্তু মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী, ফসল, খড় বা অন্য কোনো পণ্য শুকানো বা এ ধরনের কোনো কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

সেখানে যাঁরা এই কাজ করছেন তাঁরা নিজেরা ঝুঁকির মুখে থাকেন, গাড়িচালক ও যাত্রীদেরও ঝুঁকিতে ফেলেন। একজন ট্রাকচালকের বক্তব্য, মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা হলে সবাই চালকদের ধরেন। সব দোষ হয় চালকের। কিন্তু সড়কের ওপর যে অবৈধভাবে ধান শুকানো হচ্ছে, সেটার কিন্তু কোনো দোষ নেই। ধান ও খড় শুকানোর সময় বারবার হর্ন বাজালেও লোকজন শুনতে চান না।

শুধু এ তিন সড়কেই নয়, এ সময় দেশের প্রত্যন্ত এলাকার অনেক সড়কে ধানমাড়াইয়ের কাজ চলে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সড়ক বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এটি বন্ধ করার জন্য কৃষকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।