সমান সুযোগ সৃষ্টিতে পদক্ষেপে দেরি কেন

সম্পাদকীয়

সমাজে নেতিবাচক ধারণার বড় ভুক্তভোগী বলা যায় প্রতিবন্ধীদের। এখানে রাষ্ট্র ও সরকারের একনিষ্ঠ ভূমিকা অপরিহার্য। সংবিধানে সব নাগরিকের সমান সুযোগ স্বীকৃত। সেখানে প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, এটিই বাস্তবতা। এ জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনও করা হয়েছে।

যেখানে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত আছে। দুঃখজনক হচ্ছে, এ দেশে আইন করাই হয় যেন বাস্তবায়ন না করার জন্য। নয়তো প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা এমন বেহাল হবে কেন? জাতীয় পর্যায়ের নতুন তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকের বেশি স্কুলে যায় না।

ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫-১৭ বছর বয়সী) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে।

২০২০ সালে প্রতিবন্ধীদের জন্য করা আইনে, দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্কুলগুলোতে সেই ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাধারণ স্কুলগুলোতে ভর্তিই নেওয়া হয় না। এসব বিষয় নিয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারকদের অবহেলা স্পষ্ট।

সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা করলেও তা সীমিত। যেমন সমাজসেবা অধিদপ্তর ৬৪টি জেলায় ৬৪টি সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেখানে আসন মাত্র ৬৪০টি। আর ৮টি জেলায় পরিচালিত শ্রবণপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মাত্র ৭২০টি। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে শুধু দুটি স্কুল রয়েছে।

তবে এসব শিক্ষা কার্যক্রম ও স্কুল নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন উঠতে দেখি আমরা। এর বাইরে ৭২টি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মাসে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা উপবৃত্তি দেওয়া হয়। তবে সরকারের এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। যার কারণে অর্ধেকের বেশি প্রতিবন্ধী শিশু থেকে গেছে শিক্ষার বাইরে।

এমন পরিস্থিতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, দেশে সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি।

প্রতিবন্ধীরা শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে গেলে তারাও যে দক্ষ জনসম্পদ হয়ে উঠতে পারে, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণিত। সেখানে শিক্ষায় প্রতিবন্ধীদের পিছিয়ে রেখে তাদের সমাজের বোঝা হিসেবেই কি তৈরি করা হচ্ছে না? আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন এবং এ ব্যাপারে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবেন।