গরিব মানুষের কথাও একবার ভাবুন

যেখানে আরও বেশিসংখ্যক গরিব মানুষের কাছে সুলভে নিত্যপণ্য পৌঁছানোর কথা, সেখানে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেল বা খোলাবাজারে বিক্রিই বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি এখন থেকে শুধু স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীদের টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এতে ৪৩ লাখ কার্ডধারী পণ্য পাচ্ছেন না। কারণ, স্মার্টকার্ড পেয়েছে ৫৭ লাখ পরিবার। স্মার্টকার্ড না পাওয়া ৪৩ লাখ পরিবারের মধ্যে ৬ লাখের কার্ড ছাপা ও ১৩ লাখের কার্ড যাচাই–বাছাই করার কাজ চলছে। বাকিদেরও যাচাই–বাছাই হবে। অনিয়মের কারণে অনেকে আর কার্ড পাবেন না, এটা ঠিক; কিন্তু অনেকে কার্ড পাওয়ার যোগ্যও। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খোলাবাজারে বিক্রির কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। মাত্র দুই মাস সাত দিন চলার পর এ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত বছর বাজারে চাল, পেঁয়াজ, আলু, মুরগি, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারতেন। এতে একজন ক্রেতার অন্তত ৩৫০ টাকা সাশ্রয় হতো।

১ জানুয়ারি এ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। সবজির দাম কমে যাওয়ায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ট্রাকে করে সবজি বিক্রি বন্ধ করার যুক্তি না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যেখানে দাম অত্যান্ত চড়া, সেখানে ট্রাকে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি বন্ধ করার কী যুক্তি থাকতে পারে?

ট্রাকে যখন চারটি পণ্য সুলভে বিক্রি করা হতো, তখন দীর্ঘ সারির কারণে অনেকে বিমুখ হয়ে ফিরে যেতেন। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনও হয়েছে। সরকার কি একটি জনহিতকর কর্মসূচি বন্ধ করে গরিব মানুষকে কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিল না? 

আওয়ামী লীগ সরকার কার্ড তৈরিতে অনিয়ম করে থাকলে সেটি যাচাই–বাছাই করতে এত সময়ক্ষেপণ কেন? বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক যথার্থই বলেছেন, ট্রাক সেল কর্মসূচি বন্ধ করা উচিত হয়নি। বাতিল হওয়া টিসিবির ৪৩ লাখ পরিবার কার্ডের সমপরিমাণ পণ্য আপাতত ওএমএস বা ট্রাক সেলের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা যেত।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে গরিব মানুষের প্রতি এ রকম বৈষম্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে যাচাই–বাছাই করে বাকি ৪৩ লাখ পরিবারকে সুলভে পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আর কার্ডের বাইরে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আছেন, তাঁদের জন্য ট্রাক সেল বা খোলাবাজারে বিক্রির কাজটি পুনরায় শুরু করা হোক। বাণিজ্য উপদেষ্টার ভাষায় পুনর্বিবেচনার কাজটি দ্রুততম সময়ে হবে আশা করি।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, খেটে খাওয়া মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে চব্বিশের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান সফল
হতো না। অতএব, তেলা মাথায় তেল না দিয়ে তাঁদের কষ্টের কথাও একবার ভাবুন।