নিয়ন্ত্রণ আইন কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

সম্পাদকীয়

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার বর্ধিত দামে নাজেহাল সীমিত আয়ের মানুষের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলেছে বাড়তি বাড়িভাড়া। দেড় কোটি জন-অধ্যুষিত ঢাকা শহরে বেশির ভাগ মানুষই ভাড়া বাসায় থাকেন এবং তঁাদের আয়ও সীমিত।

সাধারণত খ্রিষ্টীয় বছরের শুরুতে বাড়ির মালিকেরা ভাড়া বাড়িয়ে থাকেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর কাঁঠালবাগান ঢালের এক বাসিন্দা বছরের শুরুতে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ পেয়েছেন। দেড় হাজার বর্গফুটের তিন রুমের ফ্ল্যাটের ভাড়া ২৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার টাকা।

প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, এলাকাভেদে ঢাকায় বাসাভাড়া বেড়েছে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও ফ্ল্যাটের আকারভেদে ভাড়া বেড়েছে ৫ হাজার টাকাও। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় বাসাভাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে খাবারের খরচের চেয়েও বেশি।

কংক্রিট, ঢেউটিন লোহার শিট ও মাটির ঘর—এই তিন ক্যাটাগরির বাড়ি ভাড়ার খরচ হিসাব করে বিবিএস হালনাগাদ বাড়িভাড়ার সূচক প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ ভাড়া বেড়েছে মাটির ঘর ক্যাটাগরিতে, এর সম্পর্কিত সূচক ১১০ দশমিক ৮৩ থেকে বেড়ে ১১১ দশমিক ১৯ হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তালিকা অনুযায়ী, মিরপুর ২ নম্বর এলাকায় মূল সড়কের পাশে বাড়ির ভাড়া বর্গফুটপ্রতি সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় টাকা। সে হিসাবে এক হাজার বর্গফুটের একটি বাড়ির ভাড়া হওয়ার কথা সাড়ে ছয় হাজার টাকা। যদিও করপোরেশনের বেঁধে দেওয়া এ ভাড়া কোথাও মানা হয় না। মিরপুর এলাকায় মূল সড়কের পাশে এক হাজার বর্গফুটের একেকটি বাসার ভাড়া ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, গত নভেম্বরে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭২। তার বিপরীতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় মজুরি বাড়েনি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে চাকরিজীবী ও সীমিত আয়ের অন্যান্য পেশার মানুষের জীবনযাত্রা যেখানে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে বাড়তি বাড়িভাড়া তাঁদের ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আছে। বাধ্য হয়ে অনেকে শহরের উপকণ্ঠে ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

বাসাভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকেরা নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গৃহঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বৃদ্ধিসহ নানা যুক্তি দেখান। কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষ, যাঁরা ভাড়া বাসায় থাকেন, তাঁরা কোথায় যাবেন?

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে ১৯৯১ সালে প্রণীত আইন কার্যকর হচ্ছে না। আইন কার্যকর করতে যে বিধি প্রণয়ন করা দরকার, সেটা এখনো করা হয়নি। এ বিষয়ে ২০১৫ সালের ১ জুলাই হাইকোর্ট এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যে কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। তাহলে কি সরকার বাড়ির মালিকদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই নিশ্চুপ আছে?

বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া ফেডারেশন ও ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো বাসাভাড়া বাড়ানো হয়।

কোনো মালিক যাতে ইচ্ছেমতো বাড়িভাড়া বাড়াতে না পারেন, সে জন্য এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে। আশা করি, সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এতে ঢাকা শহরে যঁারা ভাড়াবাড়িতে থাকেন, তঁাদের কিছুটা সাশ্রয় হবে।