দ্বিতীয় মাসেও বই পেল না শিক্ষার্থীরা

সম্পাদকীয়

মাধ্যমিক ও প্রাথমিক মিলে যেখানে শিক্ষার্থীদের ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই দেওয়ার কথা, সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ১৮ কোটি ১৫ লাখ। ২২ কোটি বই এখনো দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে শিক্ষাবর্ষের এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়ে অতীতে সমস্যা থাকলেও এতটা প্রকট ছিল না। কেন এমন হলো? বই ছাপার দায়িত্বে নিয়োজিত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, এবার বেশ কিছু বইয়ের পাঠক্রম বদল হয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহের দেরি নাহয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় মাসে এসেও অর্ধেকের বেশি বই শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে না পারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, পাঠ্যবই সরবরাহের ক্ষেত্রে বেশি পিছিয়ে আছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নবম শ্রেণির একটি বইও শিক্ষার্থীরা পায়নি। তারা পুরোনো বই দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ১৩টি বইয়ের মধ্যে ৩টি পেয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরে মোট ৪ কোটি শিক্ষার্থী আছে। মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখ, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সরবরাহ করা গেছে ১১ কোটি ১৭ লাখ। ১৭ কোটি বই ছাপা বাকি আছে। প্রাথমিকে মোট বইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ। বই সরবরাহ করা গেছে ৭ কোটি ৩ লাখ। এনসিটিবি আশা করছে, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা সব বই সরবরাহ করতে পারবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাকি বই সরবরাহ করতে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস লেগে যাবে। এমনকি মার্চেও গড়াতে পারে।

যেসব পাঠ্যবইয়ের পাঠক্রম বদল করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে যদিও কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাতে পারে; কিন্তু যেসব বইয়ের পাঠক্রম বদল হয়নি, সেগুলো সরবরাহ করতে কেন এত বিলম্ব হলো? প্রতিবারই দেখা যায়, এনসিটিবি কার্যাদেশ দিতে দেরি করে, আবার কোনো কোনো মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানও নানা বাহানায় সময় বাড়িয়ে নেয়। এবার কাগজের সমস্যা হয়েছে বলা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছানো ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সময়মতো বই না পেলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে কীভাবে? বিদ্যালয়ে গিয়ে কেউ পড়বে আর কেউ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে, এটা হতে পারে না। এতে কেবল তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, শিশুমনে মানসিক চাপও পড়ে। মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করে আসছিল, তাদের কার্যাদেশ পেতে দেরি হয়। কেন দেরি হবে, সে বিষয়ে মুখস্থ জবাব না দিয়ে এনসিটিবির উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

পাঠ্যবইয়ের পাঠক্রম চূড়ান্ত করা, মুদ্রণের জন্য কার্যাদেশ দিতে দেরি হলে পাঠ্যবই সময়মতো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো যাবে না, এটা কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান থেকে যে এনসিটিবি শিক্ষা নেয়নি, গ্রাফিতি অদলবদলই তার প্রমাণ। আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

ব্যর্থতার দায় এড়ানোর জন্য একে অপরকে দোষারোপ করার অপসংস্কৃতি থেকেও তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কাজটি করতে হবে সমন্বিতভাবে, যাতে কেউ কাউকে দায়ী করতে না পারে। সময়মতো বই পৌঁছানো হলে যেমন এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই প্রশংসা পেতেন, তেমনি ব্যর্থতার দায়ও তাদের নিতে হবে।