সরকারি সংস্থাগুলো কি ঘুমায়

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার শাপলা আবাসিক এলাকার লইট্যাঘোনায় পাহাড় কাটা হচ্ছে রীতিমতো আয়োজন করে। প্রথম আলোর খবর বলছে, এক মাস ধরে পাম্পের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে নরম করে তারপর কাটা হচ্ছে পাহাড়।

৭০ ফুট পর্যন্ত কাটা হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন পাহাড়ের মাঝখানে গর্ত করা হয়েছে। তারপর পাম্প দিয়ে পানি তুলে রাখা হয়েছে সেখানে। পানির হাউসও আছে।

এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। চট্টগ্রাম ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধস, জলাবদ্ধতা নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই বিপর্যয়ের জন্য নির্বিচার পাহাড় কাটা অনেকাংশে দায়ী। এ নিয়ে নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বহুবার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন। তঁারা দেখিয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে পরিবেশকে সুরক্ষা দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কেউ এসবে গা করে না।

গত বছর চট্টগ্রামের ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণাকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে চার দশকে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। ৪০ বছর আগে পাহাড় ছিল ২০০টি, যার ৬০ শতাংশের খোঁজ নেই। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে।

সংগঠন দুটি জানায়, ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রথম আলোরই এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পরিবেশবিধ্বংসী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যেরও নাম আছে।

পরিবেশের সুরক্ষায় দেশে চমৎকার সব আইন আছে, আরও আছে সরকারের মায়াকান্না। নেই শুধু পাহাড় কাটা বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে যে নির্বিচার পাহাড় কাটা যাবে না, সে কথা ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনেই বলা ছিল। এরপরও হাইকোর্টে ছুটতে হয়। ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদালত পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন।

কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আবারও এ বছরের ৩১ জানুয়ারি নতুন করে আদালত পাহাড় কাটা বন্ধের আদেশ দেন। তাতে যে কোনো কাজ হচ্ছে না, তার প্রমাণ অভিনব কায়দায় লইট্যাঘোনায় পাহাড় কাটা।

আমরা জানি, আদালতের ‘হাত’ অনেক লম্বা। প্রয়োজনে আদালত রাতের বেলায় বসেও বিচার-আচার করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত যারা পাহাড় কেটেছে, তাদের কারও বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায় না। সরকারি যে সংস্থাগুলো আদালতের নির্দেশনা মানছে না, অপরাধ দেখেও না দেখার অভিনয় করছে।