সময়সূচি থেকে পিছিয়ে যাওয়া যাবে না

সম্পাদকীয়

সরকারি চাকরিতে পরীক্ষার জট খুলতে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে পিএসসির ঘাড়ে চারটি বিসিএস পরীক্ষার জট পড়েছে। এর মধ্যে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ শাসনামলে। আর বর্তমান পিএসসি কর্তৃপক্ষ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত নভেম্বরে। এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ৪৬তম বিসিএস নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামী ৮ মে থেকে। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীেরা পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসির সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের কয়েকজন প্রতিনিধি কমিশনের পদাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।

পরীক্ষা পেছানো ও বাতিলের দাবিতে আন্দোলন সাম্প্রতিক একধরনের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, যার শুরু হয়েছিল গত বছর এইচএসসির অসমাপ্ত পরীক্ষা বাতিলের মধ্য দিয়ে।

পিএসসি আগামী দিনে প্রতিবছর একটি বিসিএস পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু আগের তিনটি পরীক্ষা বকেয়া রেখে সেটি করা সম্ভব হবে না। আগের জট খুলেই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি বিসিএস পরীক্ষার কয়েকটি ধাপ। প্রথমে ২০০ নম্বরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়, যেখানে তিন থেকে চার লাখ আবেদনকারী অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্য থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন এবং মৌখিক পরীক্ষার পর শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যে লোকবল প্রয়োজন, পিএসসির তা নেই। তাদের নির্ভর করতে হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর।

পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিটি বিসিএস এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা বলেছেন। এ ছাড়া বিসিএস পরীক্ষার পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনাসহ পিএসসি নিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে দেড় বছরের মধ্যে বিসিএস পরীক্ষা শেষ করে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে বিসিএস পরীক্ষা শেষ করতে হবে এক বছরের মধ্যে। বাকি প্রায় ছয় মাসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ ও নিয়োগ শেষ করতে হবে। এ জন্য প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা বছরের কোন সময়ে হবে, তারও একটি বার্ষিক পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন।

যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো তিন বিসিএসের জট। পিএসসি এই জট যত দ্রুত খুলতে পারবে, তত নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে। এই প্রেক্ষাপটে পিএসসির উচিত হবে ৪৪ বিসিএসের বাকি প্রক্রিয়া অবিলম্বে শেষ করো। এরপর পর্যায়ক্রমে তাদের ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের পরীক্ষা শেষ করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৪৭ বিসিএসের কার্যক্রমও শুরু করতে হবে। মুষ্টিমেয় প্রার্থীর আবদারের মুখে ৪৬ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানো ঠিক হবে বলে আমরা মনে করি না। যেকোনো একটি পরীক্ষা পেছানোর প্রভাব পরবর্তী প্রতিটি পরীক্ষায় পড়বে। যেখানে সরকারি চাকরিতে বহু পদ খালি আছে, সেখানে পরীক্ষা পেছানোর অর্থ হবে চাকরিপ্রার্থীদের অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া। অতএব, পরীক্ষার সময়সূচির বিষয়ে তারা অনড় থাকবে আশা করি।