প্রশাসন এবার কী করে দেখার অপেক্ষা

সম্পাদকীয়

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সড়ক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটি যদি হয় আইলা বা সিডরের মতো জলোচ্ছ্বাস বা সিলেটের মতো বন্যায়, তো সেই ক্ষতির পরিমাণ থাকে বিপুল। শত শত সেতু–কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোথাও ভেঙেও যায়। সেগুলোর সংস্কারের জন্য বা নতুন করে নির্মাণের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়, বাজেটও বরাদ্দ হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকা, সব সড়ক, সব সেতু বা কালভার্ট কি আদৌ সংস্কার হয় বা নতুন করে নির্মিত হয়?

সেটা হয় না বলেই খুলনার কয়রায় বেদকাশী ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ভেঙে যাওয়া সেতুটি এত বছরেও হয় না। একটি সেতুর জন্য ধরনা দিতে দিতে হয়রান হন গ্রামবাসী। পরে তরুণেরাই উদ্যোগ নিয়ে সেখানে একটি ভাসমান সেতু তৈরি করেছেন। দৃষ্টিনন্দন সেতুটি একদিকে তারুণ্যের শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে, আবার অন্যদিকে প্রশাসনের ব্যর্থতাকেও আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, বেদকাশীতে পাথরখালী নামক খালের দুই ধারে পাঁচটি গ্রাম। এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের বাস। এক পারের মানুষকে অন্য পারে যেতে হয় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন হাটবাজারের জন্য। অন্য পারের মানুষকে আরেক পারে আসতে হয় ব্যবসা–বাণিজ্য, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে।

তার মানে নিত্যদিন খাল পারাপারই এসব গ্রামের মানুষের জন্য অপরিহার্য বাস্তবতা। তবে সেখানে ভোগান্তিই শেষ কথা। কারণ, নৌকা ছাড়া সেখানে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই। শিক্ষার্থী, রোগী, বয়স্ক মানুষ ও কৃষকদের কষ্টের শেষ নেই। গ্রামবাসী বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অবহেলিত কয়রাবাসী আজীবন এভাবে অবহেলিতই থেকে যান।

তবে স্থানীয় তরুণেরা বসে থাকতে পারেননি। এলাকাবাসীর সহায়তায় ও একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের যুবকেরা তৈরি করে ফেলেছেন সেতু। প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠ জোড়া লাগিয়ে বানানো সেতুর দুই পাশে দেওয়া হয়েছে রেলিংও।

খালের ওপর সেতু হওয়ায় দারুণ খুশি এলাকাবাসী। তাঁদের ভাষ্য, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা এখানে ছিল না। কী যে কষ্ট ছিল, সেটা কেবল এ অঞ্চলের মানুষই বুঝতে পারবেন! সেতুটি হওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হয়েছে।

তবে গ্রামবাসীর দাবি একটাই, আগের মতো সেখানে একটি সেতু নির্মাণ হোক। তরুণদের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত সেতুটি টেকসই হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য, পাথরখালী খালের ওপর টেকসই সেতু নির্মাণ করা যায় কি না, সেটি যাচাই করে দেখা হবে।

আমরা আশা করছি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা হবে।