পুরান ঢাকার স্থাপত্য রক্ষায় শক্ত ব্যবস্থা নিন

ঢাকার ইতিহাস–ঐতিহ্য খুঁজতে গেলে অবধারিতভাবে নজর দিতে হবে পুরান শহরের দিকে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা আদি এই ঢাকা ডালপালা মেলে আজকের বিশাল ঢাকায় পরিণত হয়েছে। এরপরও পুরান ঢাকার যে স্বকীয়তা, তা এখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে অনেক পুরোনো স্থাপত্য। দুঃখজনক হচ্ছে, সেসব স্থাপনা সংরক্ষণে যে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তাতে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু স্থাপনায় পড়েছে হাতুড়ির আঘাত।   

পুরান ঢাকার কোনো কোনো স্থাপত্য রক্ষায় আদালতের নোটিশ থাকলেও সেগুলো কোনো কাজই করছে না। আদালতের আদেশ অমান্য করেই সম্প্রতি গেন্ডারিয়ার শতবর্ষী নান্দনিক একটি ভবনের বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। দুই মাস আগে একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভেঙে ফেলা হয় বড় কাটরার একাংশ। পুরান ঢাকায় চকবাজারের দক্ষিণে অবস্থিত মোগল আমলের সুপরিচিত একটি স্থাপনা এটি। 

সম্প্রতি হাতুড়ির আঘাত পড়া ভবনটি দীননাথ সেন রোডে সাধনা ঔষধালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত। ১৮৯৮ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। চলতি মাসে ভেঙে ফেলা হয়েছে ভবনটির নকশা করা কারুকার্যখচিত ছাদ। একতলা বাড়িটিতে নিও ক্ল্যাসিক্যাল রীতিতে নির্মিত পাঁচটি খিলান ছিল, এর মধ্যে তিনটির অভ্যন্তরের অলংকৃত অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।‌ এ ঘটনায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি) স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। এখন রাজউকের নোটিশের কারণে বন্ধ রয়েছে ভাঙার কাজ। তবে আশঙ্কা রয়েছে, যেকোনো সময় ভেঙে ফেলা হতে পারে ভবনটির অবশিষ্ট অংশও।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, পুরান ঢাকায় একটি স্থাপনা ভাঙার ঘটনা আরেকটি স্থাপনা ভাঙায় উৎসাহ জোগাচ্ছে, যা কোনোভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না। পুরোনো স্থাপত্য রক্ষায় আমাদের দেশের যে গতানুগতিক প্রক্রিয়া, তার মাধ্যমে ঠেকানো সম্ভবও নয়। নানা প্রশাসনিক জটিলতা বা আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বেড়াজালে পুরোনো স্থাপত্য রক্ষায় যে সময়ক্ষেপণ বা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়, তাতে বরং সেগুলো ধ্বংসের সুযোগই করে দেওয়া হয়। আর এসব ক্ষেত্রে বরাবরই দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তো নতুন নয়।

জেলা প্রশাসন, রাজউক, সিটি করপোরেশন ও প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের কাছে পুরান ঢাকার পুরোনো স্থাপত্যগুলোর তালিকা আছে। সে তালিকা ধরে স্থাপনাগুলো রক্ষায় কর্তৃপক্ষগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এখানে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা নাগরিক সংগঠন আছে। আছে সামাজিক সংগঠন ও পরিবেশ সংগঠন। সব সংগঠনকে স্থাপনাগুলো রক্ষায় যুক্ত করতে হবে। স্থানীয়ভাবে জনসচেতনতা তৈরি করা বড় একটি কাজ। কেউ স্থাপনা ভাঙতে এলে যেন সেখানে প্রতিবাদ বা নাগরিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। শক্ত আইনি পদক্ষেপই পারে ইতিহাসের অনন্য নিদর্শনগুলো রক্ষা করতে।