দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সারা দেশের সব জেলার যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়কে। পাশাপাশি আছে লবণ পরিবহনের গাড়িও। আর অপেক্ষাকৃত সরু হওয়ায় কিছুদিন পরপর ভয়াবহ সব দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার হচ্ছে মানুষ। কিন্তু হতাহত হওয়া এসব মানুষকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিতে হয় চট্টগ্রাম শহরে। অথচ এই সড়কের পাশে লোহাগাড়া উপজেলায় একটি ট্রমা সেন্টার রয়েছে দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে। হতাশাজনক হচ্ছে, এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই ট্রমা সেন্টারটি চালু করা যায়নি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, লোহাগাড়া উপজেলায় ট্রমা সেন্টার নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় চার কোটি টাকা। এটি উদ্বোধনও করা হয় ২০১৩ সালে। অব্যবহৃত পড়ে আছে একটি অত্যাধুনিক ভবন আর বাইরে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জন্য ‘গোল্ডেন আওয়ার’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ দুর্ঘটনার পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া যায়, তাহলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। কিন্তু যখনই এই মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসার জন্য বহুদূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এতে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, রক্তক্ষরণে অনেকের মৃত্যু ঘটে আবার অনেকে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন।
২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই ট্রমা সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। এর জন্য ২৭টি পদও সুপারিশ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। অর্থাৎ একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরির সব ব্যবস্থা করা হলেও তাকে সচল করার জন্য কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। জনগণের কষ্টার্জিত টাকার এমন অপচয় সত্যিই হতাশাজনক। একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো তৈরি হলো, অথচ তার সুফল থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত।
অবশ্য সম্প্রতি কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে অবশেষে ট্রমা সেন্টারটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুতই এটি চালু হবে এবং এর সুফল পাবে এই অঞ্চলের মানুষ। তবে এই দীর্ঘসূত্রতার দায় কে নেবে? কেন ১২টি বছর লেগে গেল একটি অতি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালু করতে? এই প্রশ্নগুলো আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে থেকেই যায়।
আমরা আশা করি, লোহাগাড়ার ট্রমা সেন্টারটি খুব দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হবে এবং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে সরকার আরও দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।