গাজীপুরের এমন দশা কেন

সম্পাদকীয়

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে একটি কম্পিউটারের দোকানে যান। ফরম পূরণ করে যান স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এবং পরে নগর ভবনে। তাঁকে জানানো হয়, আবেদন হয়নি, সার্ভারেও পাওয়া যাচ্ছে না। রফিকুল আবার সেই দোকানে যান। দোকানদার জানান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে সঠিক নিয়মেই আবেদন করা হয়েছে।

ওই দোকান থেকে তিনি যান আঞ্চলিক কার্যালয়ে। সেখানে জানানো হয়, সার্ভার ডাউন থাকায় আবেদন দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর আবেদনটি দেখে বলা হয় ডিসি অফিসে যেতে। সেখানে গেলে তাঁকে জানানো হয়, আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ঠিকমতো আবেদন পাঠানো হয়নি। এভাবে তিনি তিনবার ডিসি অফিসে যান। সেখান থেকে তাঁকে আবার পাঠানো হয় নগর ভবনে।

জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে এভাবে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়াতে হচ্ছে মানুষকে। সরকারি বেশির ভাগ সেবাই এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জন্মনিবন্ধন সনদ। মানুষকে এমন ভোগান্তিই যদি পোহাতে হয়, এই ডিজিটাল সেবার মানে কী দাঁড়াল! গাজীপুর সিটির নগর ভবনে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় থাকে। কারও জন্মনিবন্ধন নতুন করতে হবে, কারও সনদের ভুল সংশোধন করতে হবে, কারও কারও সনদ অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।

জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে জন্মনিবন্ধন করা হয়। পাঁচ বছর বয়সীদের থেকে বেশি বয়স্কদের নিবন্ধন করতে ২৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নামমাত্র একটি ফি দিতে হয়। এরপরও নানা অজুহাতে অর্থ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। গোটা কার্যক্রমকে এমন ভোগান্তির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ বাধ্য হয়েই বাড়তি টাকা দিচ্ছেন। জন্মসনদ নিয়ে এ অসহনীয় বিড়ম্বনা গোটা গাজীপুর জেলাতেই। বলা যায়, কমবেশি গোটা দেশেরই চিত্র এটি।

তথ্য যাচাই-বাছাই না করে অসতর্ক ও দায়িত্বহীনভাবে কাজ করায় সনদে নামের বানানসহ নানা ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে। এতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র করাসহ বিভিন্ন সেবা ও প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন মানুষ।

সেটি সংশোধন করতে গিয়ে আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সার্ভারের সমস্যার কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। তার মানে মানুষের ভোগান্তি দূর করতে কারও কিছু করার নেই?