একটি–দুটি নয়, পার্বত্য তিন জেলায় ১১৯টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ইটভাটাই অবৈধ। পাহাড়ের মাটি কেটে ড্রাম চিমনি ও সাধারণ মানের চুল্লিতে বনের কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু এরপরও নানা আইনি জটিলতার অজুহাতে এবং কর্তৃপক্ষের শিথিলতার কারণে ইটভাটাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হচ্ছে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে ঢালে বা তৎসংলগ্ন আধা কিলোমিটারের মধ্যে সমতলে ইটভাটা স্থাপন অবৈধ। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ইটভাটা পরিচালনায় পরিবেশ ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের অনুমতি লাগে। কিন্তু পার্বত্য তিন জেলার এসব ভাটার কোনোটাই নেই।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানের ৪৪টি, রাঙামাটিতে ২৯টি ও খাগড়াছড়িতে ৪৬টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় প্রতিবছর অভিযান চালানো হলেও স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হয় না। আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে ভাটাগুলো চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইটভাটাগুলো কেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায় না—জানতে চাইলে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখনই আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, তখনই অভিযানে যাচ্ছি। স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে।’ অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে কোনো ইটভাটার বৈধতা নেই। ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করি। তারা আদালতের আদেশ দেখিয়ে ভাটার কার্যক্রম চালায়।’
তাঁদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইটভাটাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও ইটভাটাগুলো যে শিগগিরই বন্ধ হবে না, তা আগাম বলে দেওয়া যায়। তাই প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আদালত—পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
পার্বত্য এলাকার এসব ইটভাটার মালিকদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারাও রয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষেত্রে এই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের একধরনের ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে! অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন এবং স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ না হওয়ার নেপথ্যে অর্থবিত্তের প্রভাবের পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষমতার যে একটা ভূমিকা রয়েছে, এ উদাহরণ থেকে তা স্পষ্ট।
শুধু বাতাস নয়; ইটভাটা মাটি, পানি ও বনের ক্ষতি করে থাকে। ইটভাটার আশপাশের এলাকার মানুষ চর্ম, ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে আক্রান্ত হন। ইটভাটাগুলোর কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর পরিবেশদূষণের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ রকম অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ইটভাটাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। মালিকদের বিরুদ্ধে পরিবেশদূষণ ও ক্ষতিপূরণের মামলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।