সেচের নলকূপ মেরামতে পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

কৃষি বা চাষবাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জমিতে সেচ দেওয়া। সেচসংকট তৈরি হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষকের মাথায় পড়ে হাত। তেমনই আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কুতুবাকুড়া গ্রামে। সেখানে সেচের জন্য দুটি গভীর নলকূপ অকেজো করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে উপজেলার তিন শতাধিক কৃষক বিপাকে পড়েছেন। সেখানে ১৫০ একর জমির ধান উৎপাদন এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এখন কীভাবে এই সংকটের সমাধান হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

নালিতাবাড়ীর এ এলাকার কৃষিজমিগুলো ছিল এক ফসলি, অর্থাৎ একবারই ধান হতো। ২০১০ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে সেখানে দুটি গভীর নলকূপ বসানো হয়। এর পর থেকে জমিগুলো হয় দুই ফসলি। আগে হতো আমন ধান, এরপর যুক্ত হয় বোরো ধানও। এর আগে আমন ধানের মৌসুম শেষে বাকি সময় জমিগুলো খালিই পড়ে থাকত। তার মানে, গভীর নলকূপ দুটি সেখানকার কৃষিতে বড় একটি পরিবর্তন নিয়ে আসে। কৃষকেরাও হন বড় সুবিধাভোগী।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের শাহের আলী নামের এক ব্যক্তি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে গভীর নলকূপ দুটি স্থাপন করেন। তিনি কুতুবাকুড়া, কয়ড়াকুড়ি ও অভয়পুর গ্রামের তিন শতাধিক কৃষকের ১৫০ একর জমিতে সেচ দিয়ে আসছিলেন। বর্তমানে চাষিরা তাঁদের খেতে সেচ দিয়ে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কিন্তু গত রোববার ভোরে দুর্বৃত্তরা নলকূপ দুটির মিটার বোর্ডসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলে। সিমেন্ট ও পাথর ফেলে মোটরও অকেজো করে দেয়। শাহের আলীর পরিবারের অভিযোগ, পারিবারিক শত্রুতাবশত এমনটি ঘটিয়েছে একটি পক্ষ। এর আগে সাহের আলীকে মারধর করে দুই পা ভেঙে দিয়েছিলেন তাঁরা। গভীর নলকূপ অকেজো করে দেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে একটি মামলা করা হয়েছে।

উল্লিখিত তিন গ্রামের অনেক কৃষকের ভরসা তাঁদের জমির উৎপাদিত ধান। সেই ধানে পরিবারের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সারা বছর সংসার চলে তাঁদের। এখন বোরো ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পানি দরকার; কিন্তু শত্রুতার কারণে দুটি সেচপাম্প নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তাঁরা এখন দুর্বৃত্তদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সেচ বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। যারাই এ কাজ করেছে, তারা অন্যায় করেছে। ব্যক্তিগত আক্রোশে কৃষকদের ক্ষতি করা যাবে না। সরেজমিন দেখে সেচকাজ পরিচালনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। সেচসংকট থেকে কৃষকদের অতিসত্বর দুশ্চিন্তামুক্ত করবেন তিনি। আমরা এ-ও আশা করব, দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে থানা-পুলিশ।