ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রোগীদের নিরাপত্তা কোথায়

সম্পাদকীয়

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র। সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় এটিই শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু সেই ভরসার জায়গাটির ভবনই যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? সম্প্রতি ঢামেক হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছাদের পলেস্তারা খসে এক রোগী আহত হওয়ার ঘটনায় এমন বাস্তবতা সামনে এসেছে।

সালমা বেগম নামের ওই রোগী কানের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন, কিন্তু হাসপাতালের ভেতরেই তাঁর পা আহত হলো। তা–ও আবার বারান্দায় পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। হাসপাতালের ভবনটি নির্মিত হয়েছে ১৯৪৬ সালে। দীর্ঘ প্রায় আট দশক ধরে সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। একজন চিকিৎসকও বলেছেন, এর আগেও একই ওয়ার্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাহলে কেন এ ভবন সংস্কার করা হচ্ছে না? কেন রোগীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে?

এ ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের আচরণ আরও বেশি হতাশাজনক। ওয়ার্ডমাস্টার বলছেন, তিনি কিছুই জানেন না। পরিচালকের ফোন বন্ধ। কেউ যেন এ দায় নিতে রাজি নন। এই দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা অপরাধের সমান। যখন একজন রোগী হাসপাতালে আসেন, তখন তিনি জীবনের নিরাপত্তা আশা করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সেই ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তাদের দায়িত্ব কী?

বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, স্বাস্থ্য খাতে অসংখ্য নতুন নতুন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এর পেছনে খরচ করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু এর অনেক ভবন পড়ে আছে, যা জনগণের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামো উন্নয়নে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদনও করে। অথচ ঢামেক হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

রোগীর আহত হওয়ার এ ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমরা একদিকে যেমন উন্নত চিকিৎসার স্বপ্ন দেখি, তেমনি অন্যদিকে আমাদের মৌলিক অবকাঠামো অবহেলার শিকার। আমরা আশা করব, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। শুধু ঢামেক নয়, দেশের সব জেলা–উপজেলা হাসপাতালগুলোর পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের নামে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।