প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, জুলাই ও আগস্ট—এ দুই মাসে ১৭টি মন্ত্রণালয় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ১ শতাংশও খরচ করতে পারেনি। এর মধ্যে পররাষ্ট্র, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের খরচের পরিমাণ শূন্য; অর্থাৎ তারা এক টাকাও খরচ করেনি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা।
এ তথ্য উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ হিসাবে। অতএব, একে বিরোধী দলের অপপ্রচার কিংবা গণমাধ্যমের ‘কেচ্ছাকাহিনি’ বলার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয়গুলো কেন বছরের শুরুতে ঘুমিয়ে থাকে?
উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে, এ রকম প্রকল্পগুলোতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।শামসুল আলম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
বাজেট কেবল আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনেরও প্রতিফলন। রাজনীতিতে পূর্বাপর ক্ষমতাসীনদের মধ্যে যত বিরোধই থাকুক না কেন, অর্থনৈতিক নীতি পরিকল্পনায় খুব একটা হেরফের আছে বলে মনে হয় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান বাজেটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে সতর্কবাণী উচ্চরণ করেছেন, তা বাজেটপ্রণেতাদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বাজেটে রাজনীতিবিদদের আগ্রহ ব্যয় বরাদ্দে, যত ব্যয় বাড়বে, তত রাজনীতিবিদদের মক্কেলদের খুশি করা যাবে।
সরকারের যত ব্যয় বেশি হবে, তত রাজনীতিবিদদের জন্য অনুপার্জিত মুনাফা বা ঘুষের পরিমাণ বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদেরা আয় এবং ব্যয়—উভয় বিষয় নিয়েই উদ্বিগ্ন। বাজেট যদিও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তবু বাজেট শুধু রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া সঠিক হবে না।’
এখন দেখা যাচ্ছে, বাজেটের বিষয়টি আমলাদের ওপর ছেড়ে দেওয়াও নিরাপদ নয়। অর্থবছরের শুরুতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি থাকে, তা আমরা জানি। তাই বলে দুই মাসে এক টাকা খরচ না করা কিংবা ১ শতাংশের কম খরচ হওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে?
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম প্রথম আলোতে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা-ও যুক্তিসংগত বলে মনে হয়নি। তিনি বলেছেন, উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে, এ রকম প্রকল্পগুলোতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তাহলে প্রশ্ন আসে, শিল্প, পানিসম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে, তার সবই কি অনুৎপাদনশীল? বৈশ্বিক সংকট মাথায় রেখে সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এ, বি, সি—এ তিন ভাগে আগেই ভাগ করে নিয়েছে।
যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত দুই মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি কিংবা ১ শতাংশের কম খরচ করেছে, তাদের সবটাই অনুৎপাদনশীল কিংবা কর্মসংস্থানবিমুখ নয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের হিসাবে উল্লিখিত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নামে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। তাহলে বোঝা যাবে কোন শ্রেণির প্রকল্প তারা নিয়েছিল। বিষয়টি এমন নয় যে বেছে বেছে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বি বা সি শ্রেণির প্রকল্প দেওয়া হয়েছে।
অতএব শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা না করে যাঁদের গাফিলতিতে প্রকল্পের কাজ আটকে আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যথায় অর্থবছরের শেষে তড়িঘড়ি করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ই হবে না, যেই জনগণর জন্য এসব প্রকল্প নেওয়া হয়, তারাও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।