আমাদের একেকটি নদীর সর্বনাশ ঘটে যাচ্ছে বালু বা পাথর তোলার কারণে। নদীগুলোতে সরকারিভাবে বালুমহাল ঘোষণা করে যেমন ইজারা দেওয়া হচ্ছে, আবার ইজারার বাইরেও অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর ক্ষেত্রেও তেমনটি দেখছি আমরা। সেখানে দুটি বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার বাইরেও অবাধে বালু ও পাথর তোলা হচ্ছে। এতে ওই এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু ও পাথর তোলা বন্ধে এলাকাবাসী আন্দোলনও করে আসছেন। প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও বন্ধ হচ্ছে না পরিবেশবিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ড।
যাদুকাটা একটি সীমান্ত নদী। এ নদী ভারতের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রও। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ সেখানকার হাওর এলাকাসহ এ নদী ঘুরে বেড়ান নৌকায় করে। এ ছাড়া ওই এলাকায় আছে শিমুলবাগান, বারেক টিলা, শাহ্ আরেফিন (র.) সেতু, অদৈত্য আখড়াসহ আরও পর্যটনকেন্দ্র। এ নদীতে দুটি বালুমহালের কারণে সেসব পর্যটনকেন্দ্রসহ অনেকগুলো এলাকা ও বাজার হুমকির মুখে পড়েছে। বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার বাইরে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত ড্রেজার ও সেফ মেশিন দিয়ে দিনে–রাতে অবাধে বালুপাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালুমহাল দুটি ইজারা প্রদান থেকে বিরত থাকতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, সেখানে বালু ও পাথর উত্তোলন করার কারণে গ্রামবাসীর জীবন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি তো আছেই। বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ও মহাল বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিও (বেলা) তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ১৩ ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ দিয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এই নদীর তীর কেটে, ড্রেজার বা অন্য কোনো যন্ত্র ব্যবহার করে বালু তোলার খবর পেলে অভিযান চালানো হয়। এখন এসব বন্ধ আছে। ইজারার বিষয়ে তিনি বলেন, মহাল দুটি ইজারার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। জেলা বালুমহাল ব্যবস্থা কমিটির সভায় আইন মোতাবেক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এখন স্থানীয়ভাবে জানা যাচ্ছে, গত বছর মহাল দুটির ইজারামূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এবার দর পড়েছে ৩৯ কোটি টাকা। প্রশাসন এই টাকায় মহাল দুটো ইজারা দিতে চাইছে। সেটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে সরকার কি রাজস্ব হারাবে না? তবে এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠন কেউ চায় না যাদুকাটা নদীতে কোনো প্রকার বালু বা পাথর উত্তোলন হোক, সেটি বৈধ বা অবৈধ কোনোভাবেই না। এখন দেখার অপেক্ষা প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী করে।