ময়মনসিংহে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব কেন

সম্পাদকীয়

সরকার আরও দুটি নতুন বিভাগ ঘোষণা করেছে। এর আগপর্যন্ত সর্বশেষ ঘোষিত বিভাগ ছিল ময়মনসিংহ। নতুন বিভাগ হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রমের সুবিধার জন্য নানা কার্যালয়সহ ময়মনসিংহকে একটি বিভাগীয় শহর গড়ে তোলার জন্য তখন নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এর জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন ছিল। সেটি করতে গিয়ে শুরুতে বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার এবং সেই সব জমি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। সেই জমিতে অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা থাকায় অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে দুই বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেন স্থানীয় লোকজন।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জমির চার ভাগের এক ভাগের কম জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু বাকি জমিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকেই গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। বিষয়টি সেখানে রীতিমতো জটিল আকার ধারণ করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ৩৩৬ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কেবল ৯৪৫ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। গ্রামবাসীও সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মেনে নেন।

কিন্তু তিন বছর ধরে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছে না প্রশাসন। ফলে আগের নিষেধাজ্ঞার কারণে পাঁচটি গ্রামের মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রামবাসী জানান, উচ্চশিক্ষা, বিয়ে, কৃষি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে হয়।

কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এসব জমি বন্ধক রাখতে না পারায় তাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণও পাচ্ছেন না। জমি বিক্রি করতে না পেরে ক্যানসারে আক্রান্ত এক রোগী চিকিৎসার অর্থের অভাবে মারা গেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কারণ, জমি বিক্রি করতে চাইলেও তিনি পারেননি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এস এ এম রফিকুন্নবীর বক্তব্য, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এখন শেষের দিকে। চলতি মাস থেকে অধিগ্রহণ এলাকায় নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। অধিগ্রহণের কাজ শেষে জমি বিক্রির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার এমন বক্তব্য দেওয়া হয়। ফলে শিগগিরই যে এ সমস্যার কোনো সুরাহা হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

কোন জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে আর কোনগুলো হচ্ছে না, তা অনেক আগেই ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে যেসব জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না, সেসব জমি বিক্রিতে এত দিন ধরে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার কারণ কী? আমরা আশা করব, প্রশাসন দ্রুত এ সমস্যা নিষ্পত্তি করে নানা ভোগান্তি থেকে গ্রামবাসীকে মুক্তি দেবে।