ভয়াবহ তাপপ্রবাহে নাকাল দেশবাসী। শহরগুলোতে তাপমাত্রা যা, তার চেয়ে অনুভূত হচ্ছে কয়েক ডিগ্রি বেশি। কারণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে বড় শহরগুলোর খাল, পুকুর বা জলাশয় হারিয়ে গেছে। কংক্রিটের আধিক্যের কারণে তাপ শুষে নেওয়ার কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের তুলনায় রাজশাহী নগরের সুনাম ছিল বসবাসের যোগ্যতায়। কিন্তু নগরটিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিমাণ পুকুর ভরাট করা হচ্ছে, তাতে শঙ্কিতই হতে হয়। রাজশাহী শহরের পরিণতিও কি তাহলে ঢাকা–চট্টগ্রামের মতোই হতে যাচ্ছে?
রাজশাহীর পুকুর ভরাট ও দখল নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে প্রথম আলো। এ নিয়ে সম্পাদকীয়ও লেখা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কোনোভাবেই শহরটির পুকুরগুলো রক্ষা করতে পারছে না। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। গত মার্চের শেষ দিকে দেড় একর আয়তনের বিশাল একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছিল। জেলা প্রশাসন সেখানে অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করে।
তখনো পুকুরটির বিশাল অংশ টিকে ছিল। এরপর আর কোনো খোঁজ রাখেনি তারা। গত বুধবার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক গিয়ে দেখেন, পুকুরটি পুরোপুরি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, সেখানে কলাবাগানও তৈরি করে ফেলা হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এরপরও কেউ জমির শ্রেণির পরিবর্তন করতে চাইলে এর জন্য আবেদন করতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেখেশুনে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জানাচ্ছেন, রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকায় অবস্থিত পুকুরটির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য মালিকপক্ষ আবেদন করেছিল। কিন্তু ওই পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়নি। রাতের বেলায় পুকুর ভরাট করার কারণে তাঁরা আর অভিযান চালাতে পারেননি।
প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন বক্তব্যে আমরা হতাশ। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ধানি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের বিরুদ্ধে রাত আড়াইটায় অভিযান চালানো হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময়ে এমন নজির আছে। কিন্তু রাজশাহী নগরে কেন পুকুর ভরাট বন্ধ করতে রাতে অভিযান চালানো গেল না? শুধু জরিমানা করা ছাড়া কি পুকুরমালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না?
পরিবেশবিদেরা বলছেন, গত এক দশকে রাজশাহী শহরের ৯৭ ভাগ পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। যদিও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের দাবি, অবৈধ পুকুর ভরাট বন্ধে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু পুকুর ভরাট করে কলাবাগান তৈরি করার ঘটনাতেই প্রকাশ হয়, তাদের জিরো টলারেন্সের নমুনা কেমন। পুকুরটি খনন করে পুনরুদ্ধার করা হোক। নয়তো বাকি যে অল্প পুকুর আছে, সেগুলোও আর বাঁচানো যাবে না। প্রশাসন এখন কী করে, আমরা দেখার অপেক্ষায়।