সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি

সম্পাদকীয়

করোনা মহামারি যখন বিশ্বজুড়ে দাপট দেখাচ্ছিল, তখনই স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে মহামারির প্রাদুর্ভাব কমে এলেও করোনার সঙ্গে মানিয়েই মানুষকে বসবাস করা শিখতে হবে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা আবিষ্কার এবং বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারায় মহামারির দুর্বিষহ দিনগুলো আমরা পার হয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু মহামারি যে সতর্কবার্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শিক্ষা দিয়ে গেছে, তা ভুলে গেলে বা উপেক্ষা করলে যেকোনো মুহূর্তে বিপদ আসতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে জেএন.১। দ্রুত ছড়ানোর কারণে এটিকে এরই মধ্যে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশে নতুন এ উপধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত না হলেও ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বেশি থাকায় বাংলাদেশের জন্যও সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে সরকারের কোভিড ১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ২ জানুয়ারি তাদের সভায় চারটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে। হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্রের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কারিগরি কমিটি।

আমরা মনে করি, জাতীয় পরামর্শক কমিটি সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের প্রতি যে পরামর্শ দিয়েছে, তা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষ করে যেসব দেশে জেএন.১ উপধরনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা এখন পর্যন্ত চতুর্থ ডোজ টিকা নেননি, তাঁরা যাতে টিকা নেন, সে জন্য প্রচারাভিযান শুরু করতে হবে।

করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে, এমন ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে ৭০ কোটির বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

মারা গেছেন প্রায় ৬৯ লাখ। নতুন কোনো সংক্রমণের ঢেউ মানে নতুন করে বিধিনিষেধ। শুধু স্বাস্থ্য নয়, অর্থনীতি, শিক্ষা—সবখানেই এর অভিঘাত গিয়ে পড়ে। ফলে সংক্রমণের ঢেউ আসার আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আতঙ্ক নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার প্রকৃষ্ট উপায়।