দুই প্রবীণের উদ্যোগ আমাদের আশা জাগায়

সম্পাদকীয়

আমাদের বেশির ভাগ পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় কার্যতভাবে কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে শহরগুলোর সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠু নগরায়ণে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য তো হুমকির মুখে পড়ছেই, নদী, খালসহ সব ধরনের জলাশয়ের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকছে না।

এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে না আসার কোনো উপায় নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যখন ব্যর্থ হয়, তখন তরুণেরাই খাল পরিষ্কার করতে নেমে যান। কিছুদিন আগে রাজধানীতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। একইভাবে মৌলভীবাজারে দুই প্রবীণ একটি নদীর পাড়ে হাঁটার রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছেন। বিষয়গুলো সত্যিই আশাব্যঞ্জক।

পার্ক, নদীর পাড়, সমুদ্রসৈকত—যেকোনো পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে যাওয়া বা আসা মানুষদেরও দায়িত্ব আছে সেখানকার পরিবেশ সুন্দর রাখার। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সবার মধ্যে সেই সচেতনতা কাজ করে না। ফলে ভ্রমণে গিয়ে অনেকেই সেখানকার পরিবেশ নোংরা করে ফেলে। মৌলভীবাজারের মনু নদের পাড়ে ‘শান্তিবাগ ওয়াকওয়ে’তে এমন দৃশ্য কোনোভাবে মেনে নিতে পারেন না সেখানকার দুজন প্রবীণ। তাঁরা হলেন কানাডাপ্রবাসী ফুলপ্রেমিক নুরুর রহমান এবং অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যের ছোট কাগজ ফসল-এর সম্পাদক মো. আবদুল খালিক। তাঁরা তখন স্বেচ্ছায় সেখানকার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মনু নদের পাড়ে মনু সেতুর কাছ থেকে মৌলভীবাজার প্রধান ডাকঘর পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার জায়গা দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ঘুরতে আসা মানুষের জন্য বসার বেঞ্চ ও শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর একটি ক্যাফেটেরিয়া চালুর অপেক্ষায় আছে। সকাল হলে অনেক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ সেখানে হাঁটেন, শরীরচর্চা করেন। বিকেলে শিশু-কিশোরসহ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকে।

আর তরুণ-তরুণীদের আড্ডা তো আছেই। ফলে বিপুল মানুষের আগমনে সব মিলিয়ে স্থানটি জমজমাট হয়ে উঠেছে। নানা রকম পণ্যের পসরা নিয়ে আসেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। এখানে ঘুরতে আসা মানুষ চানাচুর, চকলেট, আইসক্রিম, চিপস, আচার ও সিগারেটের বর্জ্য, পলিথিন ও বাক্স ওয়াকওয়েতে ফেলে রাখেন। আর সেসব পরিষ্কার করেন নুরুর রহমান ও আবদুল খালিক।

এই দুই প্রবীণের ভাষ্য, পৌর কর্তৃপক্ষ ডাস্টবিন রেখেছে, সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে না। ফলে স্থানটি নোংরা হচ্ছে। একজন মেয়র বা পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষে স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হবে না। ফলে তাঁরা কাজটি করছেন, যাতে অন্যরা সচেতন হন, ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন। তাহলে সুন্দর স্থানটি সব সময় সুন্দর থাকবে।

পরিবেশ সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। নুরুর রহমান ও আবদুল খালিক আমাদের সেই দায়িত্বই মনে করিয়ে দেন। সমাজে অনুপ্রেরণা তৈরিতে এই দুই প্রবীণ ব্যক্তিকে আমরা সাধুবাদ জানাই।