আর কত প্রাণহানি দেখতে হবে

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততার বড় অংশ বন্দর ঘিরেই। বন্দরে আমদানি করা পণ্য খালাস হওয়ার পর গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, আবার রপ্তানির জন্য পণ্যও গোটা দেশ থেকে আসে বন্দরে। কনটেইনারভর্তি এসব পণ্য পরিবহন করে বিশাল বিশাল লরি।

শহরের বাইরে সীতাকুণ্ড থেকে শুরু করে বন্দরের পার্শ্ববর্তী পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে ওঠা ডিপো এসব কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় থাকে। সেসব ডিপো থেকেই কনটেইনারভর্তি যানগুলো বন্দরে আসা-যাওয়া করে। এই লরিগুলোর চলাচল নগরবাসীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। নানা সময়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

গত দুই মাসে লরি দুর্ঘটনায় অন্তত তিনজন মারা গেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে, একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমন তৎপরতাও আমরা দেখি না। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ১০ মে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা স্টিল মিল বাজার এলাকায় লরি থেকে দড়ি ছিঁড়ে ছিটকে গিয়ে পণ্যবাহী একটি কনটেইনার রিকশার ওপর পড়ে। এতে রিকশার আরোহী বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। তাঁরা দুজন ডাক্তার দেখিয়ে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অভিযান চালিয়েও কনটেইনারের নিচে চাপা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে সক্ষম হননি। পরে নৌবাহিনীর ক্রেনের সাহায্যে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পণ্যবাহী কনটেইনারটি কোন প্রতিষ্ঠানের ছিল, সেটি জানা যায়নি। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও লরিচালক কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

৮ জুন বন্দর এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে রাসায়নিকবাহী লরির সংঘর্ষ হয়। এতে লরি উল্টে পড়লে তার নিচে চাপা পড়ে একজন মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারান। এখানে ফায়ার সার্ভিস নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে সক্ষম না হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষের ক্রেনের সাহায্য নিতে হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। তেল ও রাসায়নিকবাহী পরিবহন এভাবে দুর্ঘটনায় পড়লে বড় কোনো বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হয়। এ ঘটনায় অবশ্য লরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মূলত বারেক বিল্ডিং মোড় থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড ও পতেঙ্গা এলাকা নিয়ে বিমানবন্দর সড়ক, হালিশহর-সংলগ্ন পোর্ট কানেকটিং রোড ও আউটার রিং রোডে কনটেইনারবাহী লরিগুলো চলাচল করে।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকার বড় একটি অংশ এসব রোডের সঙ্গে সংযুক্ত। লরিগুলোর বেপরোয়া চলাচল ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে কনটেইনার পরিবহন নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে।

এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় ডিপো কর্তৃপক্ষ, পণ্যের মালিকপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশকেই নিতে হবে। লরি উল্টে ও কনটেইনার ছিটকে পড়ে আমরা আর কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না।