দায়ী ব্যক্তিদের ধরা হয় না কেন

সম্পাদকীয়

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়ার দাবিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কার্যালয় ঘেরাও করার পরদিন সোনারগাঁও উপজেলার সাত হাজার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

কর্মকর্তাদের দাবি, বৈধ গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার লক্ষ্যেই অবৈধ গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এটি নাকি তাঁদের নিয়মিত অভিযানের অংশ।

গ্যাস-সংযোগের বিষয়টি এমন নয় যে কেউ চাইলেই গ্যাসলাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। তিতাসের কর্মীরাই কাজটি করেছেন। তিতাস কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হলো, সোনারগাঁয়ে ৩০ হাজার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ আছে।

নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য উপজেলার অবস্থাও এর থেকে ভিন্ন নয়। প্রশ্ন হলো, এতগুলো অবৈধ সংযোগের সুযোগটি কে বা কারা করে দিলেন? কেন কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, তিতাস গ্যাসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধ সংযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বিনিময়ে প্রতিটি সংযোগের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।

সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভেকু দিয়ে মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে অবৈধ গ্যাস-সংযোগের পাইপ। ১৩ সেপ্টেম্বর সাত কিলোমিটার এলাকার বাসাবাড়ির সাত হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। জব্দ করা হয় বিপুলসংখ্যক অবৈধ পাইপ ও রাইজার। অপর একটি সূত্রের খবর, কেবল নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৭৯ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাসলাইন আছে।

সম্প্রতি রূপগঞ্জের একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা তাঁর সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হলে বিচ্ছিন্ন হওয়া অবৈধ গ্যাস-সংযোগ আবার জোড়া লাগবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ অবস্থায় অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বন্ধ হবে কীভাবে?

মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে লাভ নেই। নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে তিতাসের লোকেরা লাভবান হবেন। তাঁরা নতুন করে সংযোগ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেবেন।

কেবল গ্যাসেই অবৈধ সংযোগ নেই, বিদ্যুৎ ও পানিতেও অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি উৎপাদন করে, তার ৩০ শতাংশ সিস্টেম লস দেখানো হয়।

কাগজে-কলমে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৪৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে বলে দাবি করে, কিন্তু গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় ৩৩ কোটি ৫০ লাখ লিটার। বাকি পানি কোথায় যায়? এখানেও পানির অবৈধ সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ‘ফাউ’ কামিয়ে নিচ্ছেন। আর বছরে ক্ষতি হচ্ছে ১৪২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ৩০ শতাংশ সিস্টেম লস হয়, সেই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে না।

নারায়ণগঞ্জে অবৈধ সংযোগের নামে গ্যাস চুরি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসায় সিস্টেম লসের নামে ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব চুরির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সেই তদন্ত হতে হবে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তদন্ত কমিটিতে রাখা যাবে না। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিদ্বয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাদের নির্বাহী ক্ষমতা না থাকলেও অন্তত তারা ‘চোর’ চিহ্নিত করতে পারবে।