বিদ্যুতের খুঁটি রেখে দিয়ে কেমন উন্নয়ন

সম্পাদকীয়

একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি একাধিক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। সেটি না হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। দেখা যায় যে প্রকল্প শেষ করতে হবে, সেটি মাথায় রেখে সমন্বয়হীনভাবে কাজ শেষ করে দেওয়া হয়। তাতে জনগণ সুফল পাওয়ার বদলে বরং আরও ভুক্তভোগী হয়। এমনটি দেখা গেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার একটি ইউনিয়নে। সেখানে একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখে দেওয়া হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সবুজ গ্রাম চিরে চলে যাওয়া নতুন পিচঢালা সড়কের ঠিক মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি। ছবি দেখেই যে কারও মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এ সড়ক দিয়ে কীভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব? বিদ্যুতের খুঁটি রেখে দিয়ে এমন উন্নয়ন অবাস্তব মনে হলেও এটিই আসলে এ দেশে নিদারুণ বাস্তবতা। চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামে গেলে এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে।

ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী ও চরমারগ্যারেট গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের ইউপি কার্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে প্রায় ছয় মাস আগে ঠিকাদার সেতুসহ ওই সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করেন। কিন্তু ঠিকাদার সড়কটিতে দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরিয়ে কাজ শেষ করে চলে গেছেন। এর ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলছে যাত্রী ও যানবাহন। ইতিমধ্যে একাধিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সড়কটি দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করে। ফলে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো নিয়ে আশঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

বিদ্যুতের খুঁটিগুলো বিবেচনায় না নিয়ে কেন রাস্তার দরপত্র দিল এলজিইডি? ঠিকাদারের অভিযোগ, এলজিইডি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে খুঁটি দুটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ অফিসের কোনো তৎপরতা তিনি দেখেননি। দরপত্রেও যেহেতু বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য অর্থ বরাদ্দও ছিল না, তাই খুঁটি রেখেই তিনি কাজ শেষ করে দিয়েছেন।

এখন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যুতের খুঁটি সরানো একটু সময়ের ব্যাপার। দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। এলজিইডির চিঠি পাওয়ার পর উদ্যোগ নেওয়া হবে। যদিও এলজিইডি রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে।

এলজিইডির ভুল ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। শুরু থেকেই এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ অফিস সমন্বয় করে কাজটি করতে পারত। এখন খুঁটি সরাতে কখন দরপত্র আহ্বান করা হবে, কখন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে? এর আগে সেখানে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে এর দায় কে নেবে?