কলাপাড়ায় জটিলতা নিরসন করা হোক

সম্পাদকীয়

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের উপকূল এলাকা বসবাসের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। টেকসই বাঁধের অভাব এ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে রাখতে উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁধের জন্য মানুষের আকুতির শেষ নেই। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করলেও তা বেশি দিন থাকছে না।

জোয়ারের পানির কারণে খেত নষ্ট হচ্ছে, সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে, মানুষ কর্মসংস্থানহীন পড়ছে। দিনের পর দিন পানিবন্দী থেকে অচল হয়ে পড়ছে জনপদ। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চান্দুপাড়া তেমনই একটি গ্রাম। প্রায় ১৫ বছর আগে ঘটা ঘূর্ণিঝড় সিডরের প্রভাবে এখনো ভুগতে হচ্ছে সেখানকার মানুষকে।

বাঁধ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও আছে। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনর্নির্মাণের দাবিতে গত রোববার গ্রামের কয়েক শ নারী-পুরুষ সেখানে মানববন্ধন করেছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সিডরের কারণে রাবনাবাদ চ্যানেলের জোয়ারের প্রবল চাপে গ্রামের পাশ দিয়ে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে কয়েক দফা মেরামত করা হলেও সেই বাঁধ টেকসই হয়নি। বাঁধের কয়েকটি অংশ ভেঙে গিয়ে গ্রামের বিশাল অংশ প্লাবিত করছে।

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে আট-দশটি পাড়ায় প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ কৃষকের আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে শুধু কৃষকই নন, এলাকার সাধারণ মানুষও চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। গ্রামের পথ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটও।

ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই; উপকূলে ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ চাই—মানববন্ধনে এমন স্লোগান তুলেছেন এলাকাবাসী। ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানাচ্ছেন, বর্তমানে চান্দুপাড়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৮টি স্পট ঝুঁকিপূর্ণ। এলাকাবাসীর দাবি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি যেন দ্রুত টেকসইভাবে নির্মাণ করা হয়।

তবে পাউবো কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, এলাকার মানুষ জমি দিতে না চাওয়ার কারণে সেখানে বাঁধটি হচ্ছে না। এলাকাবাসী রাবনাবাদ চ্যানেলের একেবারে তীর ঘেঁষে বাঁধ করার জন্য বলেছেন। তাঁদের দাবি অনুসারে বাঁধ করলে তা টিকবে না। এলাকাবাসীর অসহযোগিতায় বাঁধের বরাদ্দকৃত টাকাও ইতিমধ্যে ফেরত চলে গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে বাঁধটি দ্রুত নির্মাণের জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। বাঁধ পুনর্নির্মাণ নিয়ে কোনো জটিলতা থাকলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মীমাংসা করে ফেলা হোক। একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে চান্দুপাড়ার মানুষের ভোগান্তি ঘুচে যাক।