অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হোক

সম্পাদকীয়

দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে কর্মক্ষেত্রে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ বড় অবদান রাখছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও আবাসনের সুবিধা নিয়ে এসব নারীকে কমবেশি ভুক্তভোগী হতে হয়। দেশের শহরাঞ্চলগুলোতে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি।

কিন্তু তঁাদের জন্য সরকারিভাবে আবাসনের সুবিধা একেবারেই সীমিত বলা যায়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত ৯টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল রয়েছে। যেখানে মাত্র কয়েক হাজার নারী থাকতে পারেন। ঢাকায় তিনটি কর্মজীবী হোস্টেলের মধ্যে একটির অবস্থান হচ্ছে নীলক্ষেতে। সেখানে গত বছর একটি নতুন ভবন করা হলেও অতিরিক্ত কক্ষভাড়ার কারণে সেটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মজীবী নারীরা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, রাজধানীর নীলক্ষেতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের পুরোনো দুটি ভবনের পাশে করা হয় নতুন একটি ১০ তলা ভবন। নতুন ভবনে কক্ষ পুরোনোটির চেয়ে একটু বড়।

কিন্তু সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির আসনভেদে ভাড়া পুরোনো ভবনের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে তিন গুণের বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে খরচ, অনেকের জন্য বহন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তার চেয়ে বরং একই এলাকায় বাইরে বাসাভাড়া নিয়ে বা মেস করে থাকলে খরচ আরও কম পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ভবনের বাসিন্দারা পুরোনো ভবনে যাওয়ার জন্য আবেদন করছেন। বিষয়টি হোস্টেল সুপারও স্বীকার করেছেন।

ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য মিরপুর ও খিলগাঁওয়ে আরও দুটি হোস্টেল রয়েছে। কোথাও নীলক্ষেতের নতুন ভবনের মতো এত বেশি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। নতুন ভবনে বাড়তি সুবিধা হিসেবে বিউটি পারলার, লন্ড্রি ও ব্যায়ামাগারের জায়গা রয়েছে। কিন্তু ভবনটি উদ্বোধনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এসব সুবিধা চালু হয়নি। আদৌ চালু হবে কি না, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া নতুন ভবনে কোনো ক্যানটিনও রাখা হয়নি। খাওয়ার জন্য ঠিকই পুরোনো ভবনে যেতে হয়। ক্যানটিনে মাসের শুরুতেই ৪০০ টাকা জমা দিতে হয়।

এরপর কেউ যদি এক বেলা না খান, তবু টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। ক্যানটিনের খাবারের মানও খুব খারাপ। ফলে অনেকে বাইরে খেতে বাধ্য হন। হোস্টেলের পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে বাইরে থেকে পানি কিনে পান করতে হয়।

এত সমস্যা নিয়ে একটি কর্মজীবী হোস্টেল কীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, আমাদের বুঝে আসে না। কর্মজীবী নারীদের ব্যাপারে এমন অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নতুন ভবনের ভাড়ার বিষয়টি পুনর্নির্ধারণের জন্য বিবেচনা করা হোক। আমরা আশা করব, অন্যান্য সুবিধাও দ্রুত চালু করা হবে। ক্যানটিন ও পানির সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা হোক।