খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মাঠ থেকে সারসংকটের যে ধারাবাহিক খবর আসছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে, এটি কি নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি বৃহত্তর সমস্যার পূর্বাভাস। 

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য এটি কেবল উদ্বেগের বিষয় নয়; বরং খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষি অর্থনীতি এবং জাতীয় স্থিতিশীলতার ওপর এক গভীর ছায়া ফেলছে। কারণ, রোপণ মৌসুমে সার না পাওয়া মানে শুধু উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়া নয়; বরং একটি মৌলিক অর্থনৈতিক চক্রের ওপর আঘাত হানা। 

সারসংকটের প্রথম সরাসরি প্রভাব পড়বে ফসলের উৎপাদনে। ধান, সবজি, ডাল কিংবা তেলবীজ—প্রতিটি খাতেই উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাস্তবসম্মত। দেশের খাদ্যশস্যের চাহিদা যেহেতু নির্দিষ্ট, সেহেতু খাদ্য সরবরাহ কমে গেলে বাজারে তার তীব্র প্রভাব পড়তে বাধ্য। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তা সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে নিম্নমধ্যবিত্ত ও দিনমজুর শ্রেণিকে। অথচ তাদের আয় স্থির কিন্তু ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। 

সার সরবরাহসংকট, কারখানা বন্ধ থাকা কিংবা আমদানি সমস্যার ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তা মিলছে না। বরং প্রশ্ন উঠছে—সংকটের এই চরিত্র কি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফল, নাকি সুপরিকল্পিত কোনো নাশকতার অংশ?

ইতিহাস বলে, সংকট কখনো কখনো সৃষ্টি করা হয়। বিতরণব্যবস্থায় একচেটিয়া প্রভাব, পরিবেশক-ডিলারদের কারসাজি কিংবা কিছু গোষ্ঠীর মজুতদারি—সবই ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে ঘাটতি তৈরির কৌশল হতে পারে। প্রশ্ন হলো এই সংকট থেকে কারা লাভবান হতে পারে? ফসল উৎপাদন কমলে খাদ্যমূল্য বাড়ে, বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়—এতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোনো গোষ্ঠী লাভবান হওয়ার সুযোগ পায় কি না, তা গভীরভাবে তদন্ত করা জরুরি। 

সংকট মোকাবিলার জন্য এখনই নীতিগত ও প্রশাসনিকভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। প্রথমত, সার বিতরণব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ অডিট দরকার। এ ক্ষেত্রে ডিলার, পরিবেশক, মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা পর্যালোচনা করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, মজুতদারি ও কারসাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অভিযান দরকার। এর অংশ হিসেবে সংকট সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এর জন্য বন্ধ কারখানাগুলো দ্রুত চালু করা এবং ভেঙে পড়া উৎপাদন অবকাঠামো পুনর্গঠন করা অপরিহার্য। 

সর্বোপরি সারসংকট সমাধানে সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারের সদিচ্ছা, কঠোর তদারকি এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা। মনে রাখা দরকার, সংকট আরও গভীর হওয়ার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।