স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা কাম্য নয়

জলাশয় ভরাট ও দখল রোধে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কড়া নির্দেশনা আছে। আইন তো আছেই, কিন্তু সেই আইন মানা হয় না বলেই আলাদা করে এ নির্দেশনা দেওয়ার দরকার হয়ে পড়ে। দখলদারেরা এতটাই বেপরোয়া যে সেই নির্দেশনাকেও পাত্তা দিচ্ছেন না। এমন এক দখলবাজি চলছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় পাঁচবাড়িয়া এলাকায়। সেখানে একজন সরকারি কর্মচারী সরকারি পুকুর ভরাটে উঠেপড়ে লেগেছেন। প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দিলেও তিনি তা মানছেন না। আবার প্রশাসনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, পুকুরটি পাঁচবাড়িয়া মৌজায় ২৪ শতাংশ জমির ওপর। অভয়নগর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রাহুল দেব সরদার সরকারি পুকুর ভরাট করছেন। তিনি নিজে পুকুর ভরাটের কথা স্বীকার করেছেন। শুধু তা–ই নয়, সেই পুকুর ভরাট করতে মুক্তেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হয় বালুও। নদীতে অবৈধভাবে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে বালু তোলার সেই কাজ নিজেই করেছেন রাহুল দেব। নদী থেকে পাইপের সাহায্যে ২০০ মিটার দূরে সেই বালু ফেলেন তাঁর বাড়ির পাশের সরকারি পুকুরে। এরপর ট্রলি করে অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি এনেও ফেলেন পুকুরে। একই সঙ্গে তিনটি অপরাধ তিনি করেছেন।

অভিযুক্ত রাহুল দেবের বক্তব্য, ‘স্থানীয় ক্লাব এবং আমার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ নিয়ে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে নদীর বালু নিয়ে জনস্বার্থে ওই পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ভরাটের পর ওই জমিতে খেলার মাঠ করা হবে।’ তিনি দাবি করছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মৌখিক অনুমতি নিয়েই তিনি এ কাজ করছেন। স্থানীয় মানুষও মনে করছেন, প্রশাসনের সম্মতি না থাকলে এ কাজ চালিয়ে যেতে পারতেন না রাহুল দেব। বিষয়টি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে খুবই গুরুতর ঘটনা এটি। রক্ষক হয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মচারী মিলে আইনবিরোধী ও পরিবেশবিধ্বংসী কাজ করছেন। 

যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বক্তব্য, এ ধরনের কোনো অনুমতি তাঁরা দেননি। প্রথম আলোতে প্রতিবেদনের পরে পুকুর ভরাট বন্ধ আছে। এর আগেও পুকুর ভরাট করা হলে প্রশাসন সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ঠিকই পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়। কিন্তু তখনো রাহুল দেবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এখনো নেওয়া হচ্ছে না। রাহুল দেব কি প্রশাসনের চেয়েও ক্ষমতাবান? তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এত গড়িমসি কেন? আমরা পুকুরটি পুরোপুরি দখলমুক্ত দেখতে চাই।