নাগরিকের সম্পদ, নাকি ক্লাবের বাণিজ্যকেন্দ্র

সম্পাদকীয়

রাজধানীর বুকে সবুজ আর উন্মুক্ত স্থানের বড়ই অভাব, এটি তো নতুন করে বলার কিছু নেই। দুঃখজনক হচ্ছে এ শহরে যে কয়েকটি পার্ক ও মাঠ নগরবাসীর জন্য অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও এখন নানা ধরনের দখল ও বাণিজ্যিকীকরণের শিকার। গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কের ক্ষেত্রে সেটিই দেখা গেল। পার্কটি একসময় সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু এখন এটি গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পার্কটির বড় একটি অংশ ক্লাবের দখলে চলে গেছে। সেখানে সবুজ ঘাসের খোলা জায়গা নষ্ট করে কৃত্রিম মাঠ (টার্ফ) তৈরি করা হয়েছে, যা শুধু ক্লাবের সদস্যরা বা ভাড়া দেওয়া হলেই ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার এখানে সীমিত। এটি কেবল একটি পার্কের বাণিজ্যিক ব্যবহার নয়, এটি জনগণের মৌলিক অধিকারের ওপর এক সুস্পষ্ট আঘাত।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রথমে এই সমস্যা সমাধানে কিছু পদক্ষেপ নিলেও তাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্তগুলো হতাশাজনক। পার্ক ব্যবস্থাপনার শর্ত ভঙ্গের কারণে ডিএনসিসি প্রথমে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পার্কটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার কথা জানায়। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলা হয় এবং চুক্তির ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’র অজুহাতে দখলদার ক্লাবের সঙ্গেই চুক্তি পুনর্বহাল করা হয়। এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা কী?

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ডিএনসিসি প্রথমে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিল, আবার কেনই–বা তা পুনর্বহাল করল? এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ঢাকা উত্তর সিটির পার্ক ও মাঠ উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের উচিত ছিল বোর্ড সভায় চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিনই ক্লাবটিকে ওই জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা। কিন্তু করপোরেশন সেটা না করে নোটিশ দিয়ে কালক্ষেপণ করেছে। এতে করপোরেশন ও দখলদার গোষ্ঠীর মধ্যে যোগসাজশ হয়েছে কি না, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

ইয়ুথ ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবীর আওয়ামী লীগের সময়কার প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আপন ভায়রা। মূলত রাজনৈতিক ওই প্রভাব খাটিয়েই ক্লাব কর্তৃপক্ষ তঁাদের দখলে রাখা অংশে এত দিন কোনো উন্নয়নকাজ করতে দেয়নি। কিন্তু এখনো কীভাবে সেই প্রভাব অটুট থাকে?

আমরা আশা করব, সিটি করপোরেশন যেভাবেই হোক দ্রুত পুরো পার্কটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে এবং নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেবে। কোনোভাবেই কোনো পার্ক বা মাঠের বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুযোগ নেই।